আর মাত্র ৭ দিন পরেই মহালয়া । মহালয়া থেকেই শুরু হয়ে যাবে বাঙালীর শারদ উৎসব । মহালয়ার ভোরে রেডিও তে বিরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে চণ্ডীপাঠ ও অন্যান্য টিভি চ্যানেলে মহিষাসুর মর্দিনী দেখে দিন শুরু হয় বাঙালীর । বছরের ৩৬৪ টা দিনের ভোরের থেকে এই দিনের ভোরের অনুভূতি টা একেবারেই আলাদা যা অন্যকোন দিন অনুভব করা যায়না। এইদিনে শেষ হয় পিতৃপক্ষ, আর এদিন বাঙালীরা তাদের পিতৃ পুরুষের উদ্দেশ্যে গঙ্গায় তর্পণ করে তাদের তৃপ্ত করেন। কিন্তু এই মহালয়া কে ঘিরেই আছে অনেক অজানা তথ্য যা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা ।
মহালয়ার দিন অনেকেই মোবাইল ফোনে বা সাক্ষাতে দেখা হলে , শুভ মহালয়া বলে শূভেচ্ছা জানান । কিন্তু মহালয়া কি আদৌ শুভ ?
যেহেতু মহালয়া তে আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতৃপুরুষ দের উদ্দেশ্যে তর্পণ করে থাকি, তাই এখাণে শুভ বা ভালো কিছু নেই , তাই শুভ মহালয়া বলা টা ভুল।
এবার আসি ”তর্পণ” কি ? এটা কি শুধুই স্বর্গীয় পিতৃপুরুষ দের তৃপ্ত করা ? কবে থেকে বা কি ভাবে এই তর্পণের শুরু ?
মহালয়ার পিতৃ তর্পণ নিয়ে মহাভারতের বীর কর্ণের ও রামায়ণের শ্রী রাম চন্দ্রের কথা উল্লেখিত আছে । কর্ণ সম্বন্ধীয় কাহিনীতে বলা হয় যে, কর্ণ চিরকাল মানুষকে স্বর্ণ, রত্ন ইত্যাদি দান করে গেছেন। কিন্তু তিনি পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে কখনো জল বা খাদ্য দান করেননি। কারণ তিনি নিজের পিতৃপুরুষের পরিচয় জানতেন না। তবে এটা ছিল কর্ণের অনিচ্ছাকৃত একটা ভুল। তবুও কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর মহাবীর কর্ণের আত্মা স্বর্গে গেলে সেখানে তাঁকে খেতে দেয়া হয় শুধুই সোনা আর ধনরত্ন। তখন কর্ণ এর কারণ জিজ্ঞাসা করলেন দেবরাজ ইন্দ্রকে। এর উত্তরে ইন্দ্র কর্ণকে বললেন যে, কর্ণ সারাজীবন মানুষকে সোনাদানাই দান করেছেন, পিতৃপুরুষকে কখনো জল দেননি, তাই তাঁর সাথে এমনটা করা হয়েছে। তখন কর্ণ দেবরাজ ইন্দ্রকে তাঁর অনিচ্ছকৃত ভুলের কথা জানালে ইন্দ্র কর্ণকে এক পক্ষকালের জন্য মর্ত্যে ফিরে গিয়ে পিতৃপুরুষকে জল ও অন্ন দিতে অনুমতি দিলেন। ইন্দ্রের কথা মতো এক পক্ষকাল ধরে কর্ণ মর্ত্যে অবস্থান করে তাঁর পিতৃপুরুষকে অন্নজল দিলেন। এর ফলে কর্ণের পাপ স্খলন হলো এবং যে পক্ষকাল কর্ণ মর্ত্যে এসে পিতৃপুরুষকে জল দিলেন সেই পক্ষটি পরিচিত হলো পিতৃপক্ষ নামে। অন্যদিকে রামায়ণের রামচন্দ্র মহালয়ার দিন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করেছিলেন। অনেকের ধারণা তখন থেকেই পিতৃতর্পণের প্রচলন হয়েছে।