সবার আগে যেটা বলতেই হয় তা হল আমাদের পাঠক / দর্শক যারা আমাদের শুধু এই অনুষ্ঠান করতে সাহস ও অনুপ্রেরনা দিয়েছেন তাই-ই নয়, দক্ষিন কলকাতার ভবানীপুর ৭০ পল্লী-র পুজো মন্ডপে আমাদের বিচার পর্বের গাড়ি দেখতে পেয়ে, তারা আমাদের গাড়ির পিছু নিয়ে প্রায় ভোর ৫টা অবধি আমাদের সাথে প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা ঢাকিদের ঢাকের তার উপভোগ করছিলেন।
এরপরে আসবো আমাদের এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য এবং উদ্যোগ যা আমরা প্রথম বিচার পর্বেই প্রত্যেকটি পুজো কমিটি (২৫০টি) এবং তাদের মন্ডপে আসা ঢাকিদের উৎসাহ ও তাদের অভূতপূর্ব প্রদর্শন দেখেই সফল ও সার্থক হয়েছে। ঢাকীদের বাদ্যি ছাড়া তো শারদ উৎসব অসম্পূর্ণ, বলা ভালো অসম্ভব। কিন্তু বাংলার এই প্রাচীন ঐতিহ্য যা আজ বিশ্ব দরবারেও বন্দিত সেখানে এই শারদ উৎসবের আরো এক প্রাচীন বাদ্য ও শিল্পী দের আমরা তাদের পাওনা সম্মান থেকে ব্রাত্য রেখেছি। তাই দ্যা ইন্ডিয়ান ক্রনিকেলস এর এবারের উদ্যোগ ছিল বাংলার প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা ঢাকীদের সম্মান জানানোর – শ্রেষ্ঠ ঢাক সম্মান ২০২২।
যেহেতু পূর্বে এই ধরনের উদ্যোগ সেই অর্থে দেখা যায়নি তাই ঢাকিরাও যে নানান তালে তাদের নিজস্ব নৃত্যের তালে পরিবেশন করতে পারলেও তারা তা জনসাধারণের সামনে পরিবেশন করার সঠিক স্থান ও কালের অভাব বোধ করতেন। আস্তে আস্তে কালের গর্ভে তলিয়ে যাবার আগেই বাংলার ঢাকীরা আবার আগ্নেয়গিরির মত জেগে উঠলো দ্যা ইন্ডিয়ান ক্রনিকেলস আয়োজিত, শ্রেষ্ঠ ঢাক সম্মান ২০২২- এর সাথে।
দক্ষিনের সব কটি পুজো মন্ডপের মধ্যে প্রথম ঢাকের বোলে “তান্ডব” দেখায় হাজরা পার্ক সার্বজনীন। তারপর নিউআলিপুর সুরুচি সঙ্ঘের পুজোয় ঢাকীরা তাদের ঢাকের বোল -এ এক আকাশ জুড়ে দেবাদিদেব মহাদেব এর সম্মোহন। যার জাদুবলে উপস্থিত দর্শকরাও ঢাকের তালে নাচতে শুরু করেদেন।
সেই মুহুর্তে আমরা একটা সময় ঢাক থামাতেই পারছিলাম না। আসলে ঢাকীদের আনন্দ আর তার সাথে দর্শকদের আবেগঘন মুহুর্ত কেড়েনিতে মন চাইছিল না।
যদিও সেই সময় আমাদের এই ধর্ম সঙ্কট থেকে উদ্ধার করেন সুরুচি-র সদস্যরাই। কারন ভীড় এতো বেড়ে গেছিল যে প্রায় জানজট সৃষ্টি হবার উপক্রম।
পরবর্তী গন্তব্য বেহালা ঠাকুর পুকুরে এস বি পার্ক দুর্গোৎসব। আলোর ঝরনায় ভেসে জেমস লং সরনী দিয়ে আমাদের গাড়ি এগোতে শুরু করতেই ফোনে আমাদের জানানো হয়, ঠাকুর পুকুরে এস বি পার্ক দুর্গোৎসবের ঢাকীরা আমাদের স্বাগত করার জন্য বিশেষ ভাবে প্রস্তুত। গাড়ী পৌছানোর সাথে সাথেই এস বি পার্ক দুর্গোৎসবের ঢাকী শিল্পীরা তাদের ঢাকের তালে আমাদের মন্ডপ প্রাঙ্গন অবধি স্বাগত জানায়। এরপরেই তারা তাদের অদ্ভৃত / অবর্ননীয় দক্ষতার সাথে তাদের প্রতিভা দেখান। ঢাকের তালে পুজা মন্ডপ ও মন্ডপে আসা দর্শনার্থীরা সকলেই সেই তালে মেতে ওঠেন। তৃতীয়ার রাত তখন যেন এক অন্য মায়াবী জগতে পরিনত হয়েছে। বাংলার বুকে মায়ের উপস্থিতির আবেশ তখন আমাদের সকলের শরীরে এক অনুভূতি জাগিয়েছিল।
আজ উত্তর কলকাতার বিচার পর্ব। গতকাল আমাদের সাথে বিচারক হিসাবে ছিলেন, বরিষ্ঠ সাংবাদিক ও কর্নধার সুমন মুন্সি ( আই বি জি নিউজ ) আবৃত্তিকার ও দ্যা ইন্ডিয়ান ক্রনিকেলস, সৃজন বিভাগের প্রমূখ – শ্রীমতী ক্যামেলিয়া রায় ভট্টাচার্য্য।