Soumen D : সিধু মুসেওয়ালা হত্যা ক্রমশই জটিল হয়ে উঠছে। অন্যদিকে পাঞ্জাব পুলিশ আর মুম্বাই পুলিশ তদন্তে মুসয়ালা হত্যার যে সকল কারন বা যুক্তি দেখাচ্ছে তা বেশ বিভ্রান্তিকর। প্রথম দিকে পাঞ্জাব পুলিশ জানিয়েছিল তীহাড় জেল থেকে কুখ্যাত গ্যাংস্টার লরেন্স বিষণই তার কানাডার পার্টনার গোল্ডী ব্রার এর সাথে সিধু মুসেওয়ালার থেকে মোটা অঙ্কের তোলা আদায় কে কেন্দ্র করেই এই হত্যা কাণ্ডের ষড়যন্ত্র করেছে আবার অন্যদিকে সিধু মুসেওয়ালা হত্যা কাণ্ডে জড়িত সন্দেহে গুজরাত থেকে মহাকাল নামে একজন শার্প শুটার কে গ্রেফতার করে মুম্বাই পুলিশের একটি টিম , মুসেওয়ালা হত্যা কাণ্ডের পরেই লরেন্স বিষনোই মুম্বাইয়ের বিখ্যাত কাহিনীকার ও প্রযোজক সেলিম খান কে ও তার ছেলে ভারতের অন্যতম বিখ্যাত অভিনেতা সালমান খান কে হত্যা করার লিখিত হুমকি দেবার ফলেই মুম্বাই পুলিশ এই দুটি কেসেই জড়িয়ে পড়ে। গুজরাত থেকে গ্রেফতার হওয়া সন্দেহভাজন মহাকাল কে জেরা করে মহারাষ্ট্র থেকে আরও দুজন সন্দেহ ভাজন কে গ্রেফতার করে মুম্বাই পুলিশ। এই তিন জন অপরাধী কেই মুম্বাই কোর্ট জেল হেফাজতের নির্দেশ দিলেও পর পর ৩ সপ্তাহ কেটে গেলেও তাদের কে রিমান্ডে নেবার জন্য মুম্বাই পুলিশ বা পাঞ্জাব পুলিশ কেউ দাবি জানায়নি। দুটি রাজ্যের পুলিশই হয়তো একে অপরের ওপর দায় থেকে দিতে চাইছে ।
এছারাও হত্যা কাণ্ডে ব্যাবহার করা অস্ত্র গুলির মধ্যেয় এখনও অবধি একটি অস্ত্রও উদ্ধার করতে পারেনি দুই রাজ্যের পুলিশ। ফলত খুনের প্রমানে এখনও বেশ পিছিয়ে দুই রাজ্যের পুলিশ। অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক উচ্চ-পদাধিকারি পুলিশ কর্তা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এই খুনে কর্পোরেট মিউজিক জগতের মাফিয়া দের হাত থাকতে পারে। কারন যদি সামান্য তোলা বাজি কে কেন্দ্র করে এই খুন হত তাহলে তার জন্য এত জন শার্প শুটার কে ব্যাবহার করা হতনা বা এত অত্যাধুনিক অস্ত্রের ব্যাবহার করা হতনা। এই সব অস্ত্রের জোগান বা কেনা বেচা করতেও বেশ মোটা অঙ্কের টাকা খরচা হয়েছে। শুধু তাই না বিগত প্রায় এক বছর ধরে সিধু মুসেওয়ালার গতিবিধির ওপর নজর রাখা হচ্ছিল এবং তার জন্য যে সব মানুষ দের কাজে লাগান হয়েছিল তাদের কেও সারা বছরের জন্য বেশ মোটা অঙ্কের পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছে, এখান থেকেই সন্দেহের দানা বাঁধে যে এই খুনে কর্পোরেট মিউজিক জগতের হাত থাকতে পারে। এরকম আগেও ঘটেছে । যেমন – গুলশন কুমার হত্যা কাণ্ড ।
৯০ এর দশকে টি সিরিজ ক্যাসেট বাজারে নিয়ে আসেন গুলশন কুমার। প্রথমে ধার্মিক গানের ক্যাসেট প্রবর্তন করলেও খুব দ্রুত তিনি বাজারে সব থেকে কম দামে হিন্দি বাংলা ও আঞ্ছলিক সব ভাষার সিনেমার গান বেচতে শুরু করলেন। গান রেকর্ডিং এর সাথে সাথেই গায়ক, সুরকার ও গীতিকারের থেকে সেই গানের স্বত্ব নিয়ে নিতেন গুলশন কুমার ফলত ব্যাবসার সব থেকে বেশি লাভ বা বলা যেতে পারে বারং বার লাভ একা গুলশন কুমার একাই রোজগার করতেন। আবার সব থেকে কম দামে বিক্রি করার জন্য বেশির ভাগ হিন্দি চলচিত্র তাদের গান টি সিরিজেই রিলিজ করতে পছন্দ করতেন ফলএ অন্য ক্যসেট কোম্পানি গুলি লোকসানের দিকে যাচ্ছিল। তাই গুলশন কুমার কে হত্যা করার বরাত পেয়েছিল দাউদের শার্প শুটার। গুলশন কুমার হত্যা কাণ্ডে নাম জরিয়েছিল তৎকালীন বিখ্যাত গীতিকার ও সুরকার নাদিম শাহের যিনি সেই মুহূর্তে নিজেকে আইনের হাত থেকে বাঁচাতে লন্ডনে চলে যান আর অন্যদিকে টিপস ক্যাসেট কোম্পানির মালিক তথা মুম্বাইয়ের প্রযোজক রমেশ তোড়ানি এই খুনের অভিযোগে জড়িয়ে পড়লেও প্রমানের অভাবে জামিন পেয়ে যান।
পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়ালার ক্ষেত্রে এরকম ঘটার অনেক কারন দেখা যাচ্ছে।
পাঞ্জাবি গায়ক ও পার্শ্ব গায়ক গায়িকাদের এক এক জনের এক একটি শো এর পারিশ্রমিক ৫০ লাখ থেকে বেশ কিছু কোটি টাকা অবধি ছিল পরবর্তী কালে ভারতের আর্থিক বাজারে মন্দা ও করোনা কালে লকডাউনের প্রভাবে অন্য সব শিল্পের সাথে সঙ্গীতের বাজারেও ভাটা দেখা দিয়েছিল। পার্শ্ব গায়ক গায়িকা দের শো থেকে রোজগার প্রায় ছিল না বললেই চলে। এদিকে এই সকল গায়ক গায়িকা দের কে বাজারে Promote করতে ক্যাসেট কোম্পানি গুলি বেশ মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করে ভালো মুনাফা রোজগার করতো, কিন্তু সিধু মুসেওয়ালা এই পথে হাটতেই চাননি। তিনি তার গান রেকর্ডিং করার পর সর্ব সাধারণের জন্য YouTube এ আপলোড করতেন। সাধারণ মানুষ তার গান বিনামূল্যে ঊপভোগ করতে পাড়তেন আর সিধু মুসেওয়ালার নিজস্ব পারিশ্রমিক ও ছিল অন্যদের তুলনায় বহুগুণ কম। স্বাভাবিক ভাবেই সিধু মুসেওয়ালার জনপ্রিয়তা ও YouTube রোজগার দিনে রাতে বাড়ছিল। মাস চারেক আগে এনফোর্সমেণ্ট ডিরেক্টরের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী সিধু মুসেওয়ালার বর্তমান সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৫০ কোটির বেশী যা অন্যান্য পাঞ্জাবী পার্শ্ব গায়ক – গায়িকা দের ও ক্যাসেট কোম্পানি গুলির কাছে যথেষ্ট ঈর্ষার বিষয় । এসব কিছু পাঞ্জাব পুলিস ও মুম্বাই পুলিসের হাতের কাছে থাকা স্বত্বেও কেন তারা অন্য পথে তদন্ত করছেন তা অজ্ঞাত ।