Home » স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা কবে বন্ধ হবে? শাষকের রাজদন্ড থেকে প্রজাতন্ত্র সবকিছুই আজ প্রশ্নের মুখে।

স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা কবে বন্ধ হবে? শাষকের রাজদন্ড থেকে প্রজাতন্ত্র সবকিছুই আজ প্রশ্নের মুখে।

দেখতে দেখতে ৭৭টা বছর অতিক্রান্ত হল আমাদের মাতৃভূমি ভারতবর্ষ ব্রিটিশ শাষক দের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে। নিজেদের দেশ নিজেরাই পরিচালনা ও প্রশাসক হবার অধিকার অর্জন করাটা খুব একটা সহজ ছিলনা তা আমাদের কারোর অজানা নয়। কিন্তু আমরা ভারতীয় নাগরিকরা ঠিক কতোটা দায়িত্বশীল দেশের প্রতি? এবার এটা ভাবতে হবে। স্বাধীনতা পাবার পর থেকে আমাদের দেশ উন্নত হতে হতে আজ যে শিখরে পৌঁছেছে সেখান থেকেই নিজেদের ভূলত্রুটি গুলো যদি না খেয়াল করা হয় তাহলে দেশের আগামী ভবিষ্যত খুব একটা শক্তিশালী হবেনা। রাজনৈতিক ভাবে দেশ শাষনের রাজদন্ড থেকে প্রজাতন্ত্রের সকল প্রজাকেই হতে হবে আরো দায়িত্বশীল।

স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা কবে বন্ধ হবে? শাষকের রাজদন্ড থেকে প্রজাতন্ত্র সবকিছুই আজ প্রশ্নের মুখে।

স্বাধীনতা দিবসের প্রাককালেই শুরু হবে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন। বরং বলা ভালো স্বাধীনতার উৎসব। ভারতবর্ষ আজ আর অন‍্য শক্তিশালী দেশগুলির থেকে পিছিয়ে নেই। সামরিক শক্তি থেকে অর্থনৈতিক ভাবে ভারত আজ পৃথিবীর সবকটি রাষ্ট্রের মধ‍্যে এক থেকে তিনের মধ‍্যেই। চিন আর পাকিস্তান বাদে সব কটি দেশ নিজেকে ভারতবন্ধু প্রমান করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। কিন্তু কেন? আসলে ভারতে বিদেশী পন‍্যের বাজার উন্মুক্ত করে দেওয়ার ফলে বিদেশী পন‍্যের বাজারে যা জোয়ার এসেছে তা ভারত ছাড়া অন‍্য কোন দেশ দিত পারবেনা। মূল কারন ভারতের জন সংখ্যা। আজ থেকে চল্লিশ পঞ্চাশ বছর আগে সরকারি ভাবে পরিবার পরিকল্পনা করার প্রচার চালালেও দেশের জনসংখ্যা কতটা আয়ত্তে রাখা গেছে তা নতুন করে আর না বলাই ভালো। আর বিদেশী পন‍্যের ব‍্যাবসা কে উনমুক্ত করে দেশীয় ছোট ব‍্যাবসায়ীদের কতটা ক্ষতি হয়েছে তা শুধুমাত্র শঙ্কর মুদিরাই বুঝতে পেরেছে।

স্বাধীনতার পর বেশ কারগিল অবধি যুদ্ধে আমাদের দেশ যত জওয়ান কে হারিয়েছেন তার থেকেও বেশী হারিয়েছেন উগ্রপন্থী আক্রমনে। কখনো সেনা ছাউনি আক্রান্ত হয়েছে আবার কখনও সেনা ভর্তি ট্রাক বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ অবধি সব সেনাদের জন‍্য বুলেটফ্রুফ জ‍্যাকেট উপলব্ধ হয়নি। অথচ সামরিক অস্ত্র ও অনান‍্য খাতে প্রতি বছর আলাদা করে বাজেট বরাদ্দ করা হয়।

স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা কবে বন্ধ হবে? শাষকের রাজদন্ড থেকে প্রজাতন্ত্র সবকিছুই আজ প্রশ্নের মুখে।

সামরিক বিষয়ের পরেই আসে দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে দেশের সাধারণ মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষা ও প্রত‍্যাশা মেটানোর বিষয়। স্বাধীনতার পর থেকে দেশের কেন্দ্রীয় সরকার বদল হয়েছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু আজ অবধি ইতিহাসের পাতায় থেকে গেজে বেশ কিছু ভূল তথ‍্য। দেশের জনগন সে বিষয়ে জানতে চাইলেও কেন্দ্রীয় সরকার এই তথ‍্য প্রযুক্তির উন্নত সময়েও লাল ফিতের ফাইল গোপন রেখে যাচ্ছেন। দেশের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী, যার পরিকল্পিত “জয় জওয়ান জয় কিষান” দেশ কে আজও সমৃদ্ধ করে চলেছে কিন্তু এই লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর জীবনী বা তার মৃত‍্যু রহস‍্য আজও সরকারি ভাবে ভূল তথ‍্যই প্রচার করা আছে। এমনকি আজও দেশে ২রা অক্টোবর, যে ভাবে গোটা দেশে মহাত্মা গান্ধীর জন্মজয়ন্তী পালন করা হয় সেখানে একই দিনে লাল বাহাদুর শাস্ত্রীর জন্মদিন হলেও তা রাজকীয় ভাবে পালন করা হয়না। এখানেই শেষ নয়, ভারতের স্বাধীনতার মূল কান্ডারী নেতাজী সুভাষচন্দ্র বোসের মৃত্যু রহস‍্য আজও এক অজানা রহস্যই থেকে গেল। দেশের নেতাজী গবেশকরা সেই গবেশনা চালিয়ে সরকারি পুরস্কার থেকে আর্থিক সাহায্য সব পেলেও নেতাজীর শেষ টা কি হয়েছিল তা জনগনের সামনে আসছে না। জাপানের তাইহকুতে নেতাজীর চিতাভষ্ম নেই, নেতাজী বিমান দূর্ঘটনায় মারা যাননি তা বহু সংবাদে উঠে আসার পরেও, আজও স্কুলের পাঠ‍্য পুস্তকে নেতাজীকে নিয়ে ভূলতথ‍্য পড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে অর্থাৎ আমরা জেনেশুনে ভুল শিখছি ভুল পথে ঠেলেদিচ্ছি আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ দের।

এর পরেই রয়েছে  অভূতপূর্ব  রাজনৈতিক মতাদর্শের বেশকিছু জলজ‍্যান্ত উদাহরন। দেশের ৭৭তম স্বাধীনতা পরেও দেশীয় রাজনীতিতে শিক্ষিত মানুষের অনিহা ফলত যেসব রাজনৈতিক ব‍্যাক্তিত্বদের আমরা আমাদের নেতা হিসাবে পাচ্ছি তা বেশ নিম্নমানের। বর্তমানে রাজনৈতিক নেতারা জড়িয়ে পড়ছেন ধর্ষনের আর শ্লীলতাহানীর মতো অপরাধে। কখনও বা তাদের শাস্তি হয় আবার কখনও রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে প্রশয় পেয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মহিলা কুস্তি খেলোয়ারের অভিযোগ দেশের অহংকারে যে কালিমালিপ্ত করেছে তা এড়িয়ে যাবার মতো না। অদ্ভুত ভাবে সে বিষয়ে রাজনৈতিক বিরোধীতা করলে প্রকারান্তরে অন‍্যের অন‍্য অপরাধ তুলে ধরা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার একটা ভুল করেছে মানেই রাজ‍্য সরকার কে একটা অন‍্যায় করতেই হবে বা রাজ‍্য সরকার ভুল করেছে বলে কেন্দ্রীয় সরকারের একটা ভুল করার অধিকার আছে এটা একে বারেই অসাংবিধানিক। কিন্তু এটাই এখন রাজনীতির একটা বড় প‍্যাঁচ হয়ে দাড়িয়েছে। নির্বাচনের সময়, একটি দলের হয়ে ভোট চাইতে গিয়ে, ভোটে জয়ী হবার পর কয়েক মুহুর্তে দল বদল করার যে প্রচলন শুরু হয়েছে তা প্রজাতন্ত্র কে জুতো মারার সমান।

স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা কবে বন্ধ হবে? শাষকের রাজদন্ড থেকে প্রজাতন্ত্র সবকিছুই আজ প্রশ্নের মুখে।

কিন্তু এসব নিয়ে সমালোচনা করবে কে? দেশের সংবিধানের চতুর্থ স্থম্ভ সাংবাদিকতা আজ বিপন্ন। বেশীর ভাগ সংবাদ সংস্থাই আজ কোন না কোন রাজনৈতিক দলের চাটুকারিতা করতে অভ‍্যস্ত তার সাথে তার বিরোধী দল কে তুলোধনা করাই তার মূল লক্ষ‍‍্য হয়ে উঠেছে। নিরপেক্ষ সমালোচনার ধর্ম বজায়  রাখলেই সেই সংবাদ মাধ‍্যমকে নানান মামলা মোক্কদমায় জড়িয়ে দেবার চেষ্টা করা হয়। পথে ঘাটে হেনস্তা করা হয়। ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলতে গিয়ে মনে পড়লো দেশের ধর্ম রাজনৈতিক দিকের কথা। যে দেশের বিজ্ঞানী ছিলেন এ পি জে আব্দুল কালাম, যে দেশের বিজ্ঞানীদের গবেষনার ফলে সফল হতে চলেছে চন্দ্রাভিযান সেই সময় কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক দলের কর্মীরা গরুর দুধে প্রোটিন ব‍্যাতিত সোনা খুঁজলে দেশের গৌরব কি বাড়বে। যদিও অনেক কেন্দ্রীয় নেতা বা তাদের তাবেদারগন গরুর দুধের পাশাপাপাশি গোবোর টাও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের সাথেই খান। এটা কি মূর্খামি নয়?

মূর্খামি এখানেই শেষ নয়। করোনা কালের সময় থেকেই দেশের জনগন জলের থেকে সস্তা দরে পেয়েছেন ইন্টারনেট। ইন্টারনেট মূলত আনা হয়েছিল যোগাযোগ ব‍্যবস্থা ও অন‍্যান‍্য তথ‍্য প্রযুক্তির উন্নতি সাধনে কিন্তু প্রশাষনের অবহেলার ফলে আজ দেশের বেশীর ভাগ মানুষ বিশেষ করে কিছু সংখ্যক মহিলা শরীর প্রদর্শন করে, অশ্লীল ভিডিও করে ইউটিউবের সাহায্যে ডিজিটাল অর্থ উপার্জন করছেন যা ভারতীয় সংস্কৃতির বিরুদ্ধে এবং অপমান জনক। অথচ এই একই কাজ চিনা অ‍্যাপ টিকটকে হতো কিন্তু শুধুমাত্র অশ্লীলতা বৃদ্ধির অভিযোগে সেই অ‍্যাপটিকে ভারতে নিষিদ্ধ করা হল। কিন্তু সেই এক কাজ আমেরিকার ইউটিউবে ভাইরাল হচ্ছে সেদিকে কারো লক্ষ‍্য নেই না আছে কোন পদক্ষেপ।

স্বাধীনতার নামে স্বেচ্ছাচারিতা কবে বন্ধ হবে? শাষকের রাজদন্ড থেকে প্রজাতন্ত্র সবকিছুই আজ প্রশ্নের মুখে।

এই সবকিছু নিয়েই ভাবার সময় এসেছে। ৭৭তম স্বাধীনতা দিবসেরপ্রাক কালে এই সমস‍্যা গুলিকে নিয়ে ভাবুন, আওয়াজ তুলুন। বাড় খেয়ে ক্ষুদিরাম বলে দেশের সর্ব কনিষ্ঠ ও একজন বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীর আত্মবলিদান কে ছোট করবেন না। আজ যে আনন্দ অনুষ্ঠানটির আনন্দ উপভোগ করছেন সেটির প্রতি আপনার থেকে অনেক বেশী অবদান রয়েছে ক্ষুদিরাম বোসের ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Click to Go Up
error: Content is protected !!