১০ সেপ্টেম্বর, কলকাতা: আশঙ্কাজনক ভাবে ভারতে প্রতি মুহূর্তে বেড়ে চলেছে আত্মহত্যার সংখ্যা। আর তা প্রতিরোধের লক্ষ্যেই রবিবার থেকে লাইফলাইন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে পথ চলা শুরু করল ‘সোলেস’। প্রতি বছর ১০ সেপ্টেম্বর উদযাপিত হয় বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস। আর সেই দিন থেকেই আত্মহত্যার চেষ্টা করা মানুষজন ও তাঁদের পরিবারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল সোলেস।
২০২২ সালের অগাস্ট মাসে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (NCRB) একটি পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায় ২০২১ সালে ভারতে আত্মহত্যার হার বৃদ্ধি পেয়েছে ৭.২%। যার ফলে আত্মহত্যার ঘটনার মোট সংখ্যা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৩৩-এ।
আগের বছরের তুলনায় আত্মহত্যার ঘটনার এমন বৃদ্ধি রীতিমতো উদ্বেগজনক। ২০২১ সালে, তার আগের বছরের তুলনায় ভারতে আত্মহত্যার হার ৬.২% বৃদ্ধি পায় এবং দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রতি লাখে ১২ জন করে মানুষ আত্মঘাতী হন। ১৯৬৭ সাল থেকে আত্মহত্যার বিষয়ে সমস্ত তথ্য রাখা শুরু করে এনসিআরবি। আর সেখানেই দেখা যায়, ২০২১ সালে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে। নথিতে নেই এমন আত্মহত্যার ঘটনার নজিরও রয়েছে দেশে।
দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনার হিসেব মিলেছে মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং কর্ণাটক – এই পাঁচ রাজ্য থেকে। দেখা গিয়েছে, দেশের মোট আত্মহত্যার ৫০.৪% ঘটনা এই পাঁচটি রাজ্যেই ঘটে।
এনসিআরবি’র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমান দুনিয়ায় আত্মহত্যার বিভিন্ন কারণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পেশা সম্পর্কিত সমস্যা, একাকিত্ব, দুর্ব্যবহার, হিংসা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা, মাদকাসক্তি, আর্থিক বিপর্যয় ও অন্যান্য। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (NCRB) মূলত এই তথ্যগুলি জোগাড় করে পুলিশের কাছে দায়ের হওয়া অভিযোগ থেকে।
প্রখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ড. জয় রঞ্জন রাম এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। আত্মঘাতী হওয়া ব্যক্তির পরিজনদের মানসিক আঘাতের মোকাবিলায়, সোলেস কীভাবে সাহায্য করবে, সেই বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হয় এই সভায়।
উপস্থিত ছিলেন এষা দত্ত, PRONAM-এর যুগ্ম সহায়ক (কলকাতা পুলিশ এবং দ্য বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভের একটি যুগ্ম সংগঠন); শ্রীময়ী পিউ কুন্ডু, লেখক ও সাংবাদিক; জয়ন্ত এন. চৌধুরী, আইপিএস অফিসার (অবসরপ্রাপ্ত); এবং মিত্রা সিনহা রায়, অধ্যক্ষ অ্যাডামাস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, জিডি বিড়লা শিক্ষা কেন্দ্র।
১৯৯৬ সাল থেকে আত্মহত্যা প্রতিরোধ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয় নিয়ে কাজ করে চলেছে লাইফলাইন ফাউন্ডেশন। তাদের বিশ্বাস, যেসব মানুষের মনে আত্মহত্যার চিন্তা আসে, তাঁরা মৃত্যুর চেয়েও বেশি নিজেদের জীবনের সমস্যা ও যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে চান।
লাইফলাইন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং পরিচালক সুক্ষম সিং বলেন, আত্মহত্যার প্রবণতা থাকা ব্যক্তিরা কোনওরকম দ্বিধা ছাড়াই আমাদের সংগঠনের অভিজ্ঞ স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে নিজেদের অনুভূতি ভাগ করে নিতে পারেন। আমাদের সংস্থা সবসময়ই নাম-পরিচয়হীন শ্রোতার ভূমিকা পালন করে। কেবল একবার ফোন করলেই তাঁরা আমাদের পাশে পাবেন।