আমরা অনেকেই আমেরিকা সম্পর্কে অনেক কথাই বলে থাকি কিন্তু একটা কথা মানতেই হয় যে আমেরিকা যে কোন মূল্যে তার শত্রু কে ভোলে না । যে কোন ভাবেই হোক তাকে ঠিক খুঁজে বের করে মারবেই। আমাদের দেশের মত নয় যে ১৯৯৩ সালের মুম্বাই বোমা বিস্ফোরণের পর অপেক্ষা করেই যাবে যে কবে দাঊদ কে পাকিস্তান আমাদের হাতে তুলে দেবে।
যাইহোক আসল কথায় আসা যাক। সংক্ষেপে জানা যাক আল জাওয়াহিরি কে ? আয়মান মুহাম্মাদ রবি’ আল-জাওয়াহিরি বা আল-জাওয়াহিরি ছিলেন মিশরের চিকিৎসক এবং তিনি একটি সম্ভ্রান্ত চিকিৎসক পরিবারেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। এরপরে মাত্র ১৪ বছর বয়েস থেকেই রাজনৈতিক আবহাওয়ায় জড়িয়ে পড়েন তার পর থেকে ক্রমান্বয়ে মুসলিম বিরোধী রাষ্ট্র বা গোটা দেশে মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তারের জন্য তিনি আলকায়দা যুক্ত হন। তিনি এতোটাই সামরিক বিদ্যা বুদ্ধি তে পারদর্শী ছিলেন যে তাকে আল কায়দার তৎকালীন শীর্ষ নেতা বিন লাদেণ এর পরেই রাখা হয়েছিল।
১১ই সেপ্তেম্বর ২০০১ সালে ৪টি এরোপ্লেন হাইজ্যাক করে আমেরিকার হোয়াইট হাউস সহ গগন চুম্বি বানিজ্য কেন্দ্র টুইন টাওয়ার বিল্ডিং সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় গেরিলা আক্রমণ করেছিল যাতে দেখে গোটা পৃথিবী আল কায়দার আতঙ্কে কেঁপে উঠেছিল । এই ঘটনায় আমেরিকার প্রায় ৩০০০ নাগরিক মারা গিয়েছিলেন ।
এই ঘটনার পরেই আমেরিকা উঠে পড়ে লাগে আল কায়দার পিছনে । তৎকালীন আল কায়দার শীর্ষ নেতা বিন লাদেন প্রথম দিকে এই ঘটনার দায় না নিলেও পরবর্তী কালে আল জাজিরা টি ভি একটি বিন লাদেনের একটি গোপন ভিডিও প্রকাশ করে যেখানে বিন লাদেন কে এই আক্রমনের কথা আলচনা করতে দেখা যাচ্ছে। বিন লাদেন নিজের ও নিজের পরিবারের আত্মরক্ষার জন্য স্থান পরিবর্তন করে থাকতেন । একই জায়গায় বেশিদিন থাকতেন না । প্রায় ১১ বছর পরে মার্কিন সেনা বাহিনি জানতে পারে বিন লাদেন সপরিবারে পাকিস্তানের আবতাবাদে একটি চার দিক উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা একটি বাড়িতে রয়েছেন। ২০১১ সালের ২রা মে গভীর রাতে মার্কিন সেনা বাহিনির ২ টি হেলিকপ্টার বিন লাদেনের এই গোপন ঠিকানায় অবতরন করে এবং বিন লাদেন কে গুলি করে হত্যা করে। এই অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছিল ”অপারেশন জিরোনিমো” । বিন লাদেন কে হত্যা করার পর তার দেহ সঙ্গে সঙ্গে হেলিকপটারে তুলে নিয়ে প্রথমে আফগানিস্থান ও পরে মার্কিন রনতরী তে নিয়ে যাওয়া হয়। ডি এন এ প্রজুক্তি তে তার শনাক্ত করনের পরে তার দেহ আরব সাগরে সমাধিস্থ করা হয়।
এর পর দেখতে দেখতে কেটে গেল আরও ১০ বছর , অনেকেই এই ঘটনা ভুলতে শুরু করলেও আমেরিকা কিন্তু এখনও খুঁজে চলেছিল এই ষড়যন্ত্রের আর এক পাণ্ডা কে যার নাম আল জাওয়াহিরি । গোপন সুত্র মারফত মার্কিন সেনা বাহিনি জানতে পারে , আফগানিস্থানের একটি বহুতল বাড়িতে আল জাওয়াহিরি গোপন আস্তানা করে আছেন তখন মার্কিন সেনা স্থানীয় লোকজন মারফত আগে নিশ্চিত হয় যে ইনিই আল জাওয়াহিরি কিনা তারপর তারা আরও অনুসন্ধান করে জানতে পারে আল জাওয়াহিরি বারান্দায় সময় কাটাতে পছন্দ করেন এবং সেটাও দিনের একটি বিশেষ সময়। ৩১শে জুলাই ২০২২ শে মার্কিন সেনা বাহিনি ড্রোন পরিচালিত মিসাইল দিয়ে প্রকাশ্য দিবা লোকে এবং ঘন বসতি পূর্ণ এলাকার মধ্যেয় আল জাওয়াহিরি কে নির্ভুল নিশানা করে হত্যা করেন। আল জাওয়াহিরি ছাড়া আর কোন মানুষের ক্ষয় ক্ষতি হয়নি বলেই মার্কিন সেনাবাহিনি জানিয়েছে।
সবুজ কাপড় দিয়ে ঢাকা জায়গাতেই আল জাওয়াহিরি কে ড্রোন পরিচালিত মিসাইল দিয়ে হত্যা করা হয় ।
এই হল দূর নিয়ন্ত্রিত Hellfire R9X MISSILE যা দিয়ে আল জাওয়াহিরি কে হত্যা করা হয়েছে বলেই ধারনা ।