বাঙলা ও বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গা পুজো। নতুন ক্যালেন্ডার হাতে পেলেই সবার আগে বাঙালি আজও প্রথমেই খুজে দেখে এবার দুর্গা পুজো কবে? কদিন ছুটি পাওয়া যাবে? ইত্যাদি। আসলে দুর্গা পুজো বাঙালির কাছে শুধু উৎসব নয় একটা সেন্টিমেন্ট ও বটে। কিন্তু এই দুর্গা পুজো নিয়েই আছে অনেক অজানা তথ্য যা বর্তমান আধুনিক বাঙালী সমাজের অনেকেই জানেনা।
জানেন কেন মা দুর্গার প্রতিমা তৈরী করতে বেশ্যালয়ের মাটি লাগে? অবাক হচ্ছেন? একেবারেই ঠিক শুনেছেন। আবার হয়তো এই তথ্য জানতেন কিন্তু কারন টা হয়তো অনেকেই জানেনে না। এমন কি আজও এই রীতি মেনেই মৃৎশিল্পীরা প্রতিমী তৈরী করেন।
দূর্গা মূলত শাক্তসম্প্রদায়ের আরাধ্য দেবী। এখানে ‘শক্তিবাদের’ আধারে পরম একমেবাদ্বিতীয়ম ঈশ্বরকেই ‘নারীশক্তি’ রূপে কল্পনা করা হয়েছে। সেই পরম ঈশ্বরের নারীশক্তি রূপই ‘মাদুর্গা’। শাক্ত সম্প্রদায়ের তন্ত্রশাস্ত্রের ‘গুপ্তসাধনা’ তন্ত্রের ১.১২-তে নবকন্যার বিবরণ পাওয়া যায়। নবকন্যা বলতে ভিন্ন ভিন্ন ৯ শ্রেণীর নারীকে বোঝায়। তাঁরা হলেন ১) নর্তকী/অভিনেত্রী, ২)কাপালিক, ৩)পতিতা, ৪) ধোপানী, ৫)নাপিতানী, ৬) ব্রাহ্মণী, ৭) শুদ্রাণী, ৮)গোয়ালিনী এবং ৯)মালিনী।
মা দূর্গার পূজা পদ্ধতি যেহেতু শাক্তদর্শন ও শাক্তসম্প্রদায়ের আধারে সৃষ্টি হয়েছে তাই শাক্তসম্প্রদায় কর্তৃক চিহ্নিত নবকন্যার প্রতীকস্বরূপ ওই ৯ শ্রেণীর নারীর দ্বারের মাটি নেওয়া হয় প্রতিমা গড়তে। এখানে শুধু পতিতার দ্বারের মাটি নয় বাকি আরও অষ্টকন্যার দ্বারের মাটিও সমান অপরিহার্য। এছাড়াও সাত নদী, ৫১শক্তীপিঠ এবং পঞ্চ প্রাণীর দেহবশেষও প্রতিমা গড়ার কাজে ব্যাবহৃত হয়।
দুর্গা পুজোর মূল উদ্দেশ্য সমস্ত নারীজাতির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা। সেখানে পতিতাও একজন নারী তাই তাঁকেও সন্মান দেখানো আব্যশক হয়ে পড়ে। এই সম্মান শুধু একা পতিতার প্রাপ্য নয়, সমগ্র নারী জাতির প্রাপ্য।