বর্তমানে সামাজিক মাধ্যমে শিশুদের ছবি বা ভিডিও ভাইরাল হলে ভবিষ্যতে তা তাদের জীবনে কি খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে ? হ্যাঁ আজ আমাদের আলোচনা ঠিক এটা নিয়েই । একজন সাইকোলজিস্ট .. সাইকোলজিস্ট বলতেই মানুষের মাথায় আসে পাগলের ডাক্তার। কিন্তু আদতেও কি তাই??? ডক্টর ঝিনুক ভৌমিক প্রায় দু বছর ধরে এই প্রফেশনে আছে । এই অল্প সময়ে তিনি নিজেকে অনেক ভাবে প্রকাশ করেছেন ।
ইদানিং কালে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ছোট ছোট শিশুদের কান্নাকাটি থামাতে তাদের হাতে স্মার্টফোন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যেখানে আমরা একটা সময় পার্কে খেলে বা নাচ গান আবৃত্তি শিখেছি বা সেই নিয়ে বড় হয়েছি। এই প্রশ্ন নিয়ে আমরা সরাসরি পৌঁছে গেছি ডক্টর ঝিনুক ভৌমিক এর কাছে মতামত নিতে । এমন প্রশ্ন তার সামনে রাখলেই তিনি জানান , সময় বদলেছে , আমাদের সময় সোশ্যাল মিডিয়া, হাঙ্গিং আউট এসব বিষয় ছিল না , আসলে আমরা তো একটা কিছুকে আকড়ে ধরে বাঁচতে চাই যখন এই চ্যাট করা ফোন মেসেজ ছিল না তখন ঐ রাস্তা গুলো ছিল । তখন সবাই এক সাথে থাকতো এখন পরিস্থিতি বদলেছে । বাচ্চারা এক প্রকার বাধ্য হয়ে এটা করছে
বর্তমানে দাম্পত্য জীবনে ডিভোর্স এর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান। সেক্ষেত্রে শিশুমনেও তার প্রভাব পড়ছে। সাংসারিক অশান্তির প্রভাবে অনেক শিশুর হিংস্র স্বভাব হয়ে পড়ছে। তাদের কি ভাবে সামলানো উচিত? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান , হাসবেন্ড ওয়াইফের মধ্যে কমিউনিকেশন গ্যাপ এটা সবচেয়ে বড়ো কারণ , একজন সাইকোলজিস্ট হিসেবে যদি বলতে চাই তাহলে প্রত্যেক হাজবেন্ড ওয়াইফ এর মধ্যে দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছে । চাইল্ড কে এফোরট দিয়ে ভালো করে তৈরি করার জন্য প্রফেশন নিয়ে নিজেদের মধ্যে তারা দূরত্ব তৈরি করছে । এসবের মধ্যে নিজেদের মধ্যে কমিউনিকেশন এর সময় তাদের কম হচ্ছে। যার জন্য তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে । হয়তো তারা চাইছে বাচ্চাদের ভালো করে মানুষ করতে কিন্তু ব্যাপারটা ঠিক উল্টো দরাচ্ছে । তাই হাসব্যান্ড ওয়াইফ এর জায়গা টা খুব সিকিউর করা দরকার ।
আমরা সামাজিক মাধ্যমে ; মাঝে মাঝেই শিশুদের নানা রকম ভিডিও ভাইরাল হতে দেখি। কখনও দেখি একটি শিশু গালি দিচ্ছে বা তাকে তার নিম্নাঙ্গের পোষাক খুলে দেওয়া হচ্ছে বা কেউ পড়াশোনা না করতে চেয়ে অন্য অদ্ভুত বায়না করছে। এই জাতীয় ভিডিও ভাইরাল করতে সাহায্য করছেন সেই শিশুদের বাবা মা’রাই। এতে সেই শিশুদের ভবিষ্যতে মানসিকতা ওপর কি প্রভাব পড়তে পারে এমন প্রশ্ন রাখতে তিনি বলেন ” ভিডিও টা কি পারপাস সেটা আগে জানতে হবে , যদি ক্রিয়েটিভ হয় তাহলে কোনো অসুবিধে নেই .. কিংবা যদি ভিডিও গুলো ক্রিয়েটিভ না হয় , যদি বাচ্চা র পড়তে বসতে চাইছে না , কান্নাকাটি করছে সেগুলো কখনোই দেওয়া উচিত না , এগুলো কান্নাকাটি তো আমরা প্রায়ই করে থাকি এগুলোর কোন কন্টেন্ট নেই, ভাইরাল ভিডিও তখনই হতে পারে যখন তার কোন কনটেন্ট থাকবে । তাদের মা-বাবারাই করে এইসব ভিডিও । এটাতে পরবর্তীতে বাচ্চাদের মনে একটা অন্যরকম ইম্প্যাক্ট করতে পারে ।
ছোট থেকেই বিখ্যাত হবার এই যে একটা ঝোঁক, তাতে সমাজের অন্য শিশুদের কি ক্ষতি হতে পারে? ,” এটা ঠিক ফেমাস হওয়া না । একটা কথা আছে না , ” Being famous without a fame” এটা ঠিক তেমন ফেমাস । এগুলো কখনোই বিখ্যাত হতে পরে না । কারণ এটা একটা প্ল্যান ফুলি তৈরি করা ঘটনা কখনোই এটা উইদাউট স্ক্রিপ্টেড হতে পারে না । আর এগুলোতে আর এখন বাচ্চাটাকে মানুষগুলো চিনছে কিন্তু পরবর্তীতে তাকে কেউ মনে রাখবে না। আর এসব ক্ষেত্রে সে বাচ্চা গুলো একটু ডিপ্রেশনের দিকে চলে যাচ্ছে । ”
আপনি নিজে একজন সাইকোলজিস্ট, আপনার কাছে এই সময় শিশু মন নিয়ে তাদের বাবা মা রা কতটা উদিগ্ন বলে আপনার মনে হয়? ,” এগুলো তো মা বাবা রাই করাচ্ছে । অতএব তারা জেনেবুঝে কাজ গুলো করছে এগুলো কখনোই ভালো হতে পারে না তাই পরে বুঝেও লাভ নেই । ব্যাপার টা যদি এমন হতো তাড়া বাচ্চাদের ক্রিয়েটিভিটি বাড়ানোর জন্য এমন ভিডিও তৈরি করছে তাহলে ব্যাপারটা কোন আলাদা ছিল না কিন্তু যদি ব্যাপারটা এমন হয় তারা বাচ্চাদেরকে ফেস করার জন্য এবং নিজেরা ফেমাস হওয়ার জন্য ভিডিওগুলো তৈরি করছে তাহলে সত্যিই পরবর্তীতে তাদেরকে উদ্বিগ্ন হতে হবে বলে আমার মনে হয়। ”
সচেতনতা না বাড়লে, আগামী দিনে এই সমস্যা কতটা বাড়তে পারে এমন প্রশ্ন তার সামনে রাখলে তিনি জানান ” সচেতনতা অবশ্যই বাড়ানো উচিত কারণ একটা সময় পরে বাচ্চাটাকে সবাই ভুলে যাবে তখন সে কি করবে , তাদের বাচ্চাদের কথা ভেবে তাদের সচেতনতা বাড়ানো উচিত “।