পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ যার মান ও হুশ আছে সেই নাকি মানুষ। মান ও হুশ এই দুইয়ের সংজ্ঞা কি? মান অর্থাৎ সম্মান। আজকের দিনে যার অর্থ আছে সেই সফল তারই সম্মান আছে। আর হুশ বুদ্ধি চিন্তা সচেতনতা এই সবের মিশ্রণ। কিন্তু সম্প্রতি এই মানুষের দ্বৈত রূপ ধরা পড়ল সমাজের চোখে। ওড়িশার বালেশ্বরে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় শোকাস্তব্ধ গোটা ভারতবর্ষ। হাজার হাজার মানুষ শুয়ে আছে পরপর, ও না তারা মানুষ না তারা লাশ যারা কিনা কয়েক মুহূর্ত আগেও মানুষ ছিল মুহূর্তেই তারা লাশ হয়ে গেছে। এই মৃত্যু মিছিলের ছবি সংবাদ মাধ্যম থেকে সামাজিক মাধ্যম ছড়িয়ে পড়েছে সব জায়গাতেই।
ট্রেন দুর্ঘটনাটি ঘটার পরই চোখে পড়ে এক ভিন্ন দৃশ্য। হাজার হাজার মানুষ আহত ও নিহত। কেউ নিথর বা কেউ কাতরাচ্ছে কেউ নিজের আপনজনকে খুঁজছে, এই সময় স্থানীয় লোকজনেরা সেখানে এসে এই সমস্ত মানুষদের পকেট থেকে তাদের যা আছে টাকা পয়সা গহনা সব নিয়ে পালাচ্ছে। হ্যাঁ এরাও তো মানুষ, তাদের পরিচয় জানি না তাই তাদের মান আছে কিনা বলতে না পারলেও তাদের হুশ তো আছেই, নিজের ভালো করার হুশ তাদের আছে।
আবার বালেশ্বর হাসপাতালে চোখে পড়ে এর সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী এক দৃশ্য। উদ্ধার কার্যের পর আহতদের বালেশ্বর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ভিড় করে স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্দেশ্য রক্তদান। এই হাজার হাজার মানুষের সেদিন রক্তের প্রয়োজন অবশ্যই ছিল, তা পূরন করতেই ছুটে যায় একদল অচেনা মানুষ। এই মানুষ গুলোর মান আছে কিনা জানি না তবে অন্যের ভালো করার হুশ আছে।
কথায় বলে ঈশ্বরের সবথেকে উত্তম সৃষ্টি নাকি মানুষ। তাহলে মানুষ কাকে বলব? একদল ছুটছে লোকের ভালো করার জন্য একদল নিজের ভালোর উদ্দেশ্যে অসুস্থ মানুষগুলোর থেকে সব নিয়ে আসছে। আর যে মানুষ গুলো মুহূর্তে লাশ হয়ে গেল তারা সেই সব অর্থ বা গয়না দিয়ে করবেই বা কি? তাই সেগুলো নিয়ে যাওয়াতে তাদের কোন ক্ষতি হয়নি ঠিকই কিন্তু যারা নিল তারা কি সত্যিই নিজেদের উপকার করল? সত্যিই মিথ্যে জানি না কিন্তু একদিন নাকি একজনের কাছে সব কাজের জবাবদিহি করতে হয়। সেদিন কিন্তু এই তিন পক্ষের ‘মানুষ’ই উত্তর দেবে। সেদিন কি উত্তর দেবে তা ভেবেই আজকে কাজ করাটা দরকার সবার।