Home » চাকদহ জগন্নাথ মন্দিরের ইতিহাস ও স্নানযাত্রা

চাকদহ জগন্নাথ মন্দিরের ইতিহাস ও স্নানযাত্রা

পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ আজ জগন্নাথ দেবের স্নান যাত্রা। জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এই স্নানযাত্রা উৎসব পালিত হয়। এই দিনকে জগন্নাথ দেবের জন্মতিথি হিসেবে ধরা হয়। স্কন্দ পুরাণ অনুসারে রাজা ইন্দ্রদুম্ন্য জগন্নাথ দেবের কাঠের বিগ্রহটি স্নান করিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন এই দিনে, সেই থেকে এই দিন স্নান যাত্রা নামে পরিচিত। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরে এই উৎসব খুব ধুমধাম করে পালিত হয়। পুরীর কথা তো সবাই জানে, আজ পুরীর কথা বলব না। আজ বলব নদীয়া জেলার চাকদহ নামক একটি জায়গায় অবস্থিত একটি জগন্নাথ মন্দিরের কথা। এই মন্দিরেও খুব ধুমধাম করে পালিত হয় স্নানযাত্রা। খুব বড় উৎসব অনুষ্ঠিত হয় সাতদিন ব্যাপী একটি মেলা অনুষ্ঠিত হয় মন্দির প্রাঙ্গণে।

এই মন্দির তৈরির পিছনে রয়েছে এক ইতিহাস। অন্য সব জগন্নাথ মন্দিরের মত জগন্নাথ দেবের সাথে বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি এই মন্দিরে দেখা যায় না। এই মন্দিরে জগন্নাথ দেব একা বিরাজ করছেন। এই মন্দির স্বয়ং কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র নির্মাণ করে দেন এবং কয়েকশো বিঘা জমি দেবত্র করেন। কিন্তু চাকদায় এই মন্দির গড়ে ওঠার কারণ কি?

কথিত আছে মহাপ্রভু শ্রী চৈতন্যদেব জগন্নাথ দেবকে নিয়ে নবদ্বীপ যাচ্ছিলেন পায়ে হেঁটে। জগন্নাথ দেবের আদেশ ছিল পথমধ্যে চৈতন্যদেব একবারও পিছন ফিরে তাকাতে পারবেন না। পিছন ফিরে তাকালে জগন্নাথ দেব আর এগোবেন না সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়বেন। জগন্নাথ দেবের পায়ের নুপুরের ধ্বনি শুনে সামনে সামনে এগোছিলেন মহাপ্রভু। চাকদহ সংলগ্ন অঞ্চলে এসে কাদায় জগন্নাথ দেবের পা আটকে পরায় মহাপ্রভু আর সেই নুপুরের নিক্কন ধ্বনি শুনতে পাননি। তখন তিনি পিছন ফিরে তাকাতেই জগন্নাথ দেব আর এগোননি। সেই থেকে চাকদহে বিরাজ করছেন জগন্নাথ দেব।

আর এক মত বলে শ্রী চৈতন্যদেব ও শ্রী নিত্যানন্দপ্রভু নীলাচলে অবস্থানকালে জগন্নাথ দেব নবকলেবর ধারণ করেন। পুরনো কলেবরটি নবদ্বীপে পুনঃ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে বহন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। পথমধ্যে চাকদহে তারা মূর্তি রেখে রাত্রিবাস করেন। পরদিন সকালে মূর্তি তুলতে গিয়ে দেখা যায় মূর্তির ওজন কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। মূর্তি মাটি থেকে তোলা যাচ্ছে না।

সেই থেকে চাকদহে এই পুরনো কলেবর জগন্নাথ দেব বিরাজ করছেন।
বলরাম ও সুভদ্রা বিহীন এই কাঠের বিগ্রহটির উচ্চতা ৪ ফুট। বর্তমানে ‘শ্রী চৈতন্য গৌড়ীয় মঠ’ মন্দিরটি দেখাশোনা ও পরিচালনা করে। মন্দিরটিতে নিত্যপূজা ও নিত্য ভোগবিতরণ করা হয়। স্নানযাত্রা এবং রথের সময় খুব বড় করে সেই সব উৎসব পালিত হয়। অনেক ভক্তের সমাগমও হয় এই সময়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Click to Go Up
error: Content is protected !!