Advertise your brand here -Contact 7603043747 (Call & Whatsapp)

উত্তর কোলকাতার ঐতিহ্যবাহী শোভাবাজার রাজবাড়ীর পূজোর ইতিহাস

Table of Contents

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share Our Blog :

Facebook
WhatsApp

শোভাবাজার রাজবাড়িতেই আয়োজিত হয় কলকাতার প্রথম জমকালো, বড়মাপের দুর্গাপূজা, যার ফলে আজও অনেক শহরবাসীর কাছেই শোভাবাজার রাজবাড়ির পুজো না দেখলে পুজো সম্পূর্ণই হয় না। উত্তর কলকাতার শোভাবাজার এলাকা, এবং বিশেষ করে সেই এলাকায় অবস্থিত রাজবাড়ি, শহরের অবশ্য দ্রষ্টব্য ১০টি স্থানের মধ্যে একটি, বিশেষত দুর্গাপুজোর সময় তো বটেই।

একটি তথ্যসূত্র থেকে জানা যায়, শোভাবাজারের কাহিনি সেই সময় শুরু, যখন কলকাতা শহরেরই কোনও অস্তিত্ব ছিল না, এবং তখনও পৃথক পৃথক গ্রাম হিসেবে পরিচিত ছিল সূতানুটি, কলিকাতা, এবং গোবিন্দপুর, যে তিনটি গ্রামকে একত্রিত করে শহরের পত্তন করেন জোব চার্নক। তা এই কাহিনি কতকটা এরকম – বসাক নামে বাংলার এক ধনী ব্যবসায়ী পরিবার তাঁদের আদি নিবাস সপ্তগ্রাম থেকে উঠে এসে বসতি গড়েন সূতানুটিতে। নতুন জায়গায়ও বজায় থাকে তাঁদের ধনভাগ্য, এবং জঙ্গল কেটে সাফ করে বাড়ি তৈরি করেন তাঁরা। ১৬৯০ বা তার কাছাকাছি সময়ে শহর কলকাতার ভিত প্রতিষ্ঠা করেন জোব চার্নক, এবং ১৭৫৭ সালে দেখা যায়, কলকাতার সবচেয়ে ধনী পরিবারগুলির মধ্যে গণ্য হচ্ছে বসাক পরিবারও। এবং এই সমৃদ্ধি ও খ্যাতির কারণে পরিবারের তৎকালীন কর্তা শোভারাম বসাকের নামেই একটি এলাকার নাম হয় শোভাবাজার।

কর্তা ছিলেন নবকৃষ্ণ দেব, এই এলাকায় বাস করতে আসেন ১৭৫৮ সালের পরে, যখন তাঁদের আদি নিবাস গোবিন্দপুরে ফোর্ট উইলিয়ামের জন্য জায়গা খালি করতে নিজেদের ভিটে থেকে উৎখাত হয়ে যান তাঁরা। ফোর্ট উইলিয়াম কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পান দেব পরিবার, যা দিয়ে পটলডাঙ্গার কাছে জমি কেনেন তাঁরা। এখানে কতদিন তাঁদের বাস ছিল, তা জানা যায় না, কিন্তু নবকৃষ্ণ দেব পরিবারের কর্তা হওয়ার পর শোভাবাজারে উঠে আসেন তাঁরা, কারণ এখানে তখনও জমির দাম অপেক্ষাকৃত কম।

অল্পবয়সেই পিতৃহারা নবকৃষ্ণের মা ছিলেন শক্ত মহিলা, এবং পুত্রের ভবিষ্যৎ উন্নতির কথা ভেবে নিশ্চিত করেছিলেন যে ছেলে যেন ইংরেজি এবং আরবি সহ একাধিক ভাষা শেখে। প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে নবকৃষ্ণ ব্রিটিশ আধিকারকদের সঙ্গে নিয়মিত মেলামেশা শুরু করেন, যেমন করতেন তখনকার অনেক ব্যবসায়ীই, এবং ক্রমশ হয়ে ওঠেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির তরফের এক মধ্যস্থতাকারী। কিন্তু ব্রিটিশদের সঙ্গে তাঁর সহযোগিতার এখানেই শেষ নয়। নবকৃষ্ণ দেব কিন্তু নিজেকে ব্রিটিশদের কাছে একরকম বিকিয়েই দিয়েছিলেন, কোম্পানির কর্তাদের সঙ্গে যেচে ঘনিষ্ঠতা করেছিলেন সম্পত্তি এবং অর্থের লোভে।

অনেকেই সম্ভবত জানেন না ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধের নেপথ্যে নবকৃষ্ণের ভূমিকার কথা। সেই যুদ্ধ, যা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের ভিত গড়ে দেয়, যে ভিত টলানো যায় নি পরবর্তী ২০০ বছরেও। যেসময় বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলাহ নিজের রাজত্ব এবং কলকাতা শহর ব্রিটিশদের গ্রাস থেকে বাঁচানোর জন্য লড়ছেন, সেসময়ই তাঁর সেনাপতি মীর জাফর ব্রিটিশদের সঙ্গে চক্রান্ত করছেন, সিরাজকে সিংহাসনচ্যুত করে নিজে নবাব হওয়ার লোভে। অন্যদিকে নেপথ্যে, বিশেষ করে পলাশীর যুদ্ধের প্রাক-মুহূর্তে, ব্রিটিশদের সাহায্য করে গেছেন নবকৃষ্ণ, কোম্পানির কর্মচারী রবার্ট ক্লাইভের নেতৃত্বে, রচনা করেছেন সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। সিরাজের রাজত্বের পতনের পর তাঁর তোষাখানা লুট করতেও ব্রিটিশদের সাহায্য করেন নবকৃষ্ণ।

বেশিরভাগ মানুষই জানেন না, ক্লাইভ এবং নবকৃষ্ণের বন্ধুত্ব ঠিক কতটা গভীর ছিল। পলাশীর যুদ্ধের পর ব্রিটিশদের বিজয়োৎসব পালন করার উদ্দেশ্যে শোভাবাজারে নিজের বাড়ির দরজা খুলে দেন নবকৃষ্ণ। কথিত আছে, প্রথম “বাড়ির পুজোর” এই উপলক্ষ্যেই আয়োজন করেন তিনি, যেখানে দেবীর পায়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করার আমন্ত্রণ পান ক্লাইভ। তবে এই পুজোয় শ্রদ্ধাভক্তির পাট বিশেষ ছিল না, ছিল ব্রিটিশ অতিথিদের মন পাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা। খাদ্য-পানীয় বাদেও পুজোর আচার-অনুষ্ঠানের পাশাপাশিই ছিল বাইজি নাচের ব্যবস্থাও।

 

ঠাকুরদালানের যেখানে প্রতিমা বসানো হয়, তার একেবারে মুখোমুখিই ছিল নাচঘর। আজ ভগ্নদশা তার, জলহাওয়া অবাধে খেলে সেখানে, কারণ ছাদ ভেঙে পড়ার পর আর মেরামত করা হয় নি। নাচঘরের একদিকে একটি সিল করা দরজা, যেখান দিয়ে যাতায়াত করতেন বাইজিরা, পরিবারের বাসভবনের থেকে আলাদা পথে।

এই পুজোর বিপুল সাফল্য অনুপ্রেরণা জোগায় অন্যান্য ধনী ব্যবসায়ীদের, যাঁরা স্ব স্ব গৃহে ধুমধাম সহকারে চালু করে দেন দুর্গাপূজা। সবাই অবশ্য বাইজির ব্যবস্থা রাখতেন না। বাড়ির পুজোয় কোনও ইউরোপীয়ের, বিশেষ করে ব্রিটিশের, উপস্থিতি, হয়ে ওঠে অর্থ, সামাজিক প্রতিষ্ঠা, এবং কোম্পানির সঙ্গে সান্নিধ্যের প্রতীক।

 

More Related Articles

রাজ‍্য ও রাজনীতি

বেসরকারি স্কুলের ফি বৃদ্ধি রুখতে সরকার আনছে নতুন বিল: জানালেন শিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু

কলকাতা: রাজ্যের বেসরকারি স্কুলগুলির ফি বৃদ্ধি রুখতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার নতুন একটি বিল আনতে চলেছে। এই বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু সম্প্রতি ঘোষণা করেছেন যে, অভিভাবকদের আর্থিক চাপ কমাতে এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও স্বচ্ছ করতে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নিতে চলেছে।

Read More »
স্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য

দোল উৎসবে বিষাক্ত রং থেকে চোখ ও ত্বকের সুরক্ষা: জেনে নিন কিছু কার্যকরী ঘরোয়া টিপস

দোল পূর্ণিমা মানেই রঙের উৎসব, আনন্দ, আর উন্মাদনা! কিন্তু বাজারের রাসায়নিকযুক্ত রং আমাদের ত্বক ও চোখের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। চুলকানি, অ্যালার্জি, শুষ্কতা এমনকি ত্বকের স্থায়ী ক্ষতিও হতে পারে এসব রঙের কারণে। তাই দোল খেলার আগে ও পরে কিছু বাড়তি যত্ন নেওয়া জরুরি। আসুন জেনে নিই কীভাবে সহজ ঘরোয়া উপায়ে চোখ ও ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিত করবেন।

Read More »
বিনোদন জগত

Zee Bangla উপস্থাপন করছে ‘সোনার সংসার ২০২৫’ – ২৫ বছরের গৌরবময় যাত্রার উদযাপন এক ঝলমলে সন্ধ্যায়

কলকাতা, ১২ই মার্চ, ২০২৫: বাংলা বিনোদনের শীর্ষস্থানীয় চ্যানেল Zee Bangla এবার তার ২৫ বছরের গৌরবময় যাত্রা উদযাপন করতে চলেছে ‘সোনার সংসার ২০২৫’-এর মাধ্যমে। এই মহাধারার রাত্রি এক মহা উৎসবে রূপ নেবে, যেখানে থাকবে মনোমুগ্ধকর পারফরম্যান্স, আবেগঘন মুহূর্ত এবং বাংলা বিনোদন জগতের প্রতি এক অসীম শ্রদ্ধার্ঘ্য।

Read More »
Featured News

আজ আমাদের ন্যাড়াপোড়া…. জানেন কি ? এই ন্যাড়া পোড়ার পিছনের পৌরাণিক কাহিনী

বাংলার লোকসংস্কৃতির অন্যতম আকর্ষণীয় উৎসব হলো ন্যাড়া পোড়া। বিশেষ করে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে এই উৎসবটি বেশ জনপ্রিয়। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীতে অনুষ্ঠিত এই উৎসব মূলত হোলিকা দহন বা হোলি পূর্ণিমার একটি অংশ। তবে বাংলার মাটিতে এটি কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে পালিত হয়। কিন্তু, এই ন্যাড়া পোড়ার পেছনে রয়েছে এক গভীর পৌরাণিক কাহিনী। চলুন জেনে নেওয়া যাক এই উৎসবের ঐতিহ্য ও ইতিহাস।

Read More »
EDITOR PICKS

নেট দুনিয়া এখন জমজমাট “ভার্চুয়াল দোল” নিয়ে! রঙের উচ্ছ্বাস এবার ডিজিটাল স্ক্রিনে

দোলযাত্রা বা হোলি, যা রঙের উৎসব হিসেবে পরিচিত, এবার এক নতুন মাত্রা পেয়েছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। সারা বিশ্বের নেটিজেনরা এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভার্চুয়াল দোল খেলায় মেতে উঠেছে। কেউ ডিজিটাল ফিল্টার ব্যবহার করে নিজেকে রঙিন করছে, কেউ আবার ভার্চুয়াল স্টিকার ও জিআইএফ শেয়ার করে বন্ধুবান্ধবদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে।

Read More »
Featured News

Windows Productions-এর “আমার বস” সিনেমার প্রথম গান “বসন্ত ডেকেছে আমাকে” মুক্তি পেলো রঙিন হোলি পার্টির মাধ্যমে

Windows Productions তাদের বহু প্রতীক্ষিত সিনেমা “আমার বস”-এর প্রথম গান “বসন্ত ডেকেছে আমাকে” আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেছে। এই মনোমুগ্ধকর গানটি তারুণ্য, নবজীবন এবং বসন্তের আনন্দকে উদযাপন করে। গানটির উদ্বোধন হয় Soul The Sky Lounge-এ, যেখানে হোলি-থিমযুক্ত পার্টির মাধ্যমে উৎসবমুখর এক পরিবেশ তৈরি করা হয়েছিল। অতিথিদের জন্য ছিল লাইভ চাট কাউন্টার, সুস্বাদু কাবাব, মুচমুচে জিলিপি, এবং রাজস্থানি রাবড়ি-ঠান্ডাই, যা পুরো অনুষ্ঠানে উষ্ণতা, উদ্দীপনা ও উৎসবের আবহ সৃষ্টি করেছিল।

Read More »
error: Content is protected !!