পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ ‘ভাই’ এই শব্দটি আজকের দিনে দাঁড়িয়ে রক্তের সম্পর্ক লিঙ্গভেদ সবকিছুর উর্দ্ধে পৌঁছে গেছে। সহোদর হলেই শুধুমাত্র সে ভাই নয়, বা ভাই সম্বোধন এখন আর শুধুমাত্র পুং লিঙ্গ বিশেষে হয়না। ভাই এখন বন্ধুত্বের ডাক আপনজনের ডাক ভালোবাসার ডাক। যেকোনো কাউকে বন্ধু হোক বা প্রেমিক কিমবা প্রেমিকা সম্বোধন একটাই ভাই। ভাই ডাকটা মানুষকে কাছে টানার আপন করে নেওয়ার এক অপ্রতিরোধ্য অস্ত্র।
নারী পুরুষ নির্বিশেষে ‘ভাই’ ডাকটা সার্বজনীন হয়ে উঠেছে। কিছু বছর আগেও ভাই বলে কাউকে ডাকা মানে তাকের নিজের সহোদরের সম্মান দেওয়া সেই ভালোবাসার মানে ছিল অন্য। বন্ধুকে ভাই বলে ডাকা বা নিজের ভাইএর মত দেখা এ তো বহু পুরনো প্রথা। তবে প্রেমিক বা প্রেমিকাকে ভাই বলে ডাকা এই ঘটনা বেশ কিছু বছর ধরে শুরু হয়েছে। বাঙালির জীবনে ভালোবাসার ডাক পরকে আপন করে নেওয়ার ডাক এই ভাই।
রবি ঠাকুর বাঙালির প্রাণের মানুষ। যাকে ছাড়া বাঙালি ভাবতে পারে না। ভাই সম্বোধন টা আজকের নয় বা একালের নয়। রবিঠাকুরের অসংখ্য চিঠির মধ্যে তার স্ত্রী মৃণালিনী দেবিকে লেখা বেশ কিছু চিঠি পাওয়া যায়।
মৃণালিনী দেবীকে কবি ‘ছুটি’ বলে ডাকতেন। কখনও ‘ছোটবউ’ বলেও ডাকতেন। স্ত্রীকে লেখা অসংখ্য চিঠিতে তিনি স্ত্রীকে ‘ভাই’ বলে সম্বোধন করেছেন। ‘ভাই ছুটি’ বা ‘ভাই ছোটবউ’ এই সম্বোধন তার অনেক চিঠিতেই পাওয়া যায়। অর্থাৎ ভালোবাসার মানুষকে ভাই বলে ডাকা এ বাঙালি জীবনের নতুন কিছু নয়।
বাঙালি মানে প্রাণের ঠাকুর রবীন্দ্রনাথ। তিনি একাল বা সেকালের নন তিনি সর্বকালের। তিনি নাকি ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা। ১৩০০ সালে বসে তিনি লিখেছেন তার একটি বিখ্যাত কবিতা ‘১৪০০ সন’। ১০০ বছর পর কি হবে তা তিনি ভাবতে পারতেন। আসলে ১০০ বলে নয় পৃথিবীতে যতদিন বাঙালি থাকবে ততদিন পর্যন্ত তিনি সমস্ত বাঙালির ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছিলেন। আজকের দিনে ভাই এর মত একটা সম্বোধন দিয়ে যে বাঙালি ভালোবাসার মানুষকে আপন করে নেবে তা হয়তো এত বছর আগেই বুঝতে পেরেছিলেন।