বলিউড বিনোদন দুনিয়া মাঝে মাঝেই উত্তপ্ত হয় কাষ্টিং কাউচ নিয়ে। কি এই কাষ্টিং কাউচ তা আজকের দিনে অনেকেরই অজানা নয় তবুও যারা জানেন না তাদের জন্য এটার মানে হল ” কোন একটি বিশেষ চলচ্চিত্র বা সিরিয়ালে, অভিনয় বা যেকোন কাজে সুযোগ পেতে গেলে, সুযোগ প্রদানকারী ব্যাক্তির প্রতিবাদহীন শয্যাসঙ্গী হতে হবে। কাষ্টিং কাউচের পোষাকি আরো একটা নাম আছে, “কম্প্রোমাইজ” (Compromise)। ”
বলিউডে এখন এই কাষ্টিং কাউচের বিরুদ্ধে মূখ খুলেছেন অনেকেই। রাধিকা আপ্তে (Radhika Apte) , সুরভীন চাওলা (Surveen Chowla ) , টিস্কা চোপরা( Tiska Chopra ), কল্কি কোয়েচলিন ( Kolki Choyechline ) ও এলি আব্রামের ( Eli Abram ) মতো প্রখ্যাত অভিনেত্রীরা। অভিযোগ উঠেছে বহু নামী দামী পরিচালকের বিরুদ্ধে। এই সব অভিনেত্রীদের বক্তব্য তারা আগেও মূখ খুলতে চেয়ে ছিলেন কিন্তু যেহেতু তারা তখন একেবারেই যশ খ্যাতিহীন নবীন তাই তাদের কথায় আমোল দেওয়া হয়নি। আজ তাদের কথা শোনা হয় তাই তারা আজ মূখ খূলছেন নতুন করে।
কলকাতা বিনোদন জগতেও রয়েছে এই কাষ্টিং কাউচ বা কম্প্রোমাইজের (Compromise) মতো জঘন্যতম রীতি। যা ক্রমেই একটি নিয়মে পরিনত হয়েছে। শুধুমাত্র অভিনয় জগতেই নয়, বিজ্ঞাপন জগতে মডেলিং এর ক্ষেত্রেও এই এক নিয়ম চালু হয়েছে।
সম্প্রতি কলকাতায় সমগ্র বিনোদন জগতে শুরু হয়েছে এক নতুন আন্দোলন। #boycott #boycottcomprowork। সামাজিক মাধ্যমে যা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়তেই, কলকাতা বিনোদন জগতের, অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা ঘৃন্য চেহারা টা সামনে আসতে শুরু করলো।
পুজা কুলে(Puja Kuley), বাঙালী এই প্রতিভাবান তনয়া এখন মুম্বাই মহানগরীতে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক মানের বিজ্ঞাপনী সংস্থার মডেল এবং বেশ কিছু বিশ্ব বিখ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনারের স্বীকৃত মডেল। ব্যাস্ততার মধ্যেই তার কাছে সামাজিক মাধ্যমেই পৌছে যায় কলকাতা বিনোদন জগতের এই #boycott #boycottcomprowork দাবানলের আগুন। নিজেকে চুপ রাখতে না পেরে সরাসরি তার সামাজিক মাধ্যমে লাইভ ভিডিও করে আবারো ক্ষোভ উগরে দিলেন। চিৎকার করে, অস্রুসিক্ত চোখে মনে করালেন তার সাথে ঘটে যাওয়া ২০১৯ সালের সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা ।
কোন একটি সিরিয়ালে অভিনয় করার Audition জন্য গিয়েছিলেন, ষ্টার জলসা, জি বাংলা ও হইচই খ্যাত পরিচালক সুমন দাসের (Sumon Das) কাছে। পরিচালকের ইচ্ছা অনুযায়ী যেতে হয়েছিল একটু সন্ধ্যা করেই, অডিশনের যাবতীয় কথা হতে হতে একটু রাত হতেই একাকী পুজা কে পেয়ে পরিচালক সুমন দাসের (Sumon Das) ঘৃন্য পাশবিক চরিত্র বেরিয়ে আসে। প্রথমে শ্লীলতাহানী এবং নিজেকে ধর্শনের হাত থেকে বাঁচাতে পরিচালকের ( গল্ফ গ্রীনে অবস্থিত ) ফ্ল্যাটের অন্য ঘরে নিজেকে দরজা বন্ধ করে বন্দী করে ফেলেন। চিৎকারের কোন ফল হয়নি। কারন পাশেই চলছিল একটি সঙ্গীতানুষ্ঠান।
মাইকের তীব্র আওয়াজ সেদিন পুজার চিৎকার কে ছাপিয়ে গিয়েছিল। সারারাত পরিচালক সুমন দাস, নেশায় বুঁদ হয়ে বারং বার বন্ধ দরজায় বাইরে থেকে লাথি মেরেছেন, পুজা কে এস এম এস করে গালি গালাজ সহ খুনের হুমকি দিয়ে বেরিয়ে আসতে বলেছিলেন। আশে পাশের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীদের মধ্যে কয়েকজন কিছু আঁচ করে দেখতে এসে ছিলেন কিন্তু পুজা বন্ধ ঘরে থাকায় তারা কিছু না দেখতে পেয়েই চলে যান। পরের দিন সকালে পুজা দরজা খোলায় পরিচালক সুমন দাস আবারও একই চেষ্টায় মত্ত হলে পুজা তখন একটু সাহস নিয়ে চিৎকার করে লোক ডাকার ভয় দেখাতে তিনি ক্ষান্ত হয়েছিলেন। তখন মাইকের আওয়াজ ও ছিল বন্ধ। নিজেকে ঐ ফ্ল্যাট থেকে মুক্ত করে নিচে নামতেই, নিচের প্রতিবেশী এক মাসিমার কাছে পুজা খান্নায় ভেঙে পড়লে মাসিমা জানিয়েছিলেন মাঝে মাঝেই নাকি ঐ পরিচালকের ফ্ল্যাট থেকে কাদঁতে কাঁদতে অনেক মেয়েকেই বেরিয়ে যেতে দেখেছেন।
এর পর পুজা গিয়েছিলেন থানায় পরিচালক সুমন দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে। কিন্তু সেখানে তাকে ঘন্টা খানেক বসিয়ে সব জেনে সাধারণ একটা জেনারেল ডাইরি নিয়েই পুলিশ তার কর্তব্য শেষ করে। আসলে তখন পুজা নেহাতই একজন উঠতি মডেল বা অভিনেত্রী। পিছনে নেই কোন হাতযশ বা প্রভাবশালী ব্যাক্তি। অন্যদিকে পরিচালক খুব স্বাভাবিক ভাবেই বিনোদন জগতের দৌলতে শাষক দলের ঘনিষ্ঠ হতে পারেন।
পুজার ভিডিও তে এও জানা যায় যে এই পরিচালক বহু মেয়ের সর্বনাশ করার পরেও কলকাতার বিখ্যাত মডেল অভিনেত্রী দর্শনা বনিক কেও এই একই নোংরা প্রস্তাব দিয়েছিল। দর্শনা সেই প্রস্তাব কোন ভাবে প্রত্যাখান করার সুযোগ পেয়েছিলেন। অন্যদিকে অভিনেত্রী তৃনা সাহা পুজা কে এ বিষয়ে মূখ না খোলার পরামর্শ দিয়েছিলেন সেই সময়, সেই অভিযোগের ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন পুজা নিজের লাইভ ভিডিও তে।
পুজা কুলের ( Puja Kuley ) এই অভিযোগের ভিত্তিতে এখনো কোন প্রতিক্রিয়া দেননি পরিচালক সুমন দাস ( Sumon Das) তবে কলকাতা বিনোদন জগতে #boycott #boycottcomprowork এর এই দাবানল অদুরে যে একটি বড় আকার ধারন করতে পারে তা আন্দাজ করা যায়।
আয় তবে সহচরী, নেতাজীর মতো জনপ্রিয় সিরিয়ালের এই পরিচালক সুমন দাসের ( Sumon Das) বিরুদ্ধে এই একই অভিযোগে বহু নারী থানায় অভিযোগ জানানোর পরও বহাল তবিয়তে এই পরিচালক প্রথম সারির টিভি চ্যানেল ও ওটিটি প্ল্যাটফর্মে কাজ করে চলেছেন। বর্তমানে এই পরিচালকের নতুন সিরিয়াল আসছে যার নাম সোহাগ জল।
কলকাতা বিনোদন জগতে এই রকম জঘন্য অত্যাচারের বিরুদ্ধে আর্টিষ্ট ফোর ফোরাম বা অন্য ইউনিয়ন গুলির কি ভুমিকা তাও অজানা। শুধুমাত্র আর্থিক লাভের দিকে তাকিয়ে এই সব জঘন্য মানসিকতার মানুষেল হাতে খুন হচ্ছে নতুন প্রতিভা।
আর কত দিন? আর কতদিন চলবে এই অন্যায়? আমরাও জানতে চাই। চাই পুজার ওপর হওয়া অত্যাচারের সঠিক বিচার।