কাহিনী, চিত্রনাট্য এবং পরিচালনা- শুভাঞ্জন বসু
সৃজনশীল পরিচালনা- জয়দীপ ব্যানার্জি
প্রযোজনা – ফিল্মস অ্যান্ড ফ্রেমস
শিলিগুড়ির ছাপোষা ভালো ছেলেটা ছিল সূর্য। চাকরি করছে, ভালো টাকা কামাচ্ছে, বাবা মা’কে সুখে রাখছে কিন্তু জীবনে একটাই চাপ- মেয়ে পাচ্ছে না বিয়ে করার মতন। পাচ্ছে না বলাটা হয়তো ভুল কারণ এর আগে ৬৭টা বিয়ে ক্যানসেল হয়েছে। আর এই বিয়ে ভেস্তে দেওয়ার পেছনে প্রধান কারিগর ওর বন্ধু শাওন। দুই বন্ধুর ব্যাচেলর লাইফ শেষ হয়ে যাওয়ার ভয়ে ও কিছুতেই বিয়ে করতে দিচ্ছে না সূর্যকে। নিজেও কোনোদিন প্রেম করেনি। ঠিক করে নিয়েছে সূর্যকেও করতে দেবে না।
ওদিকে কার্শিয়াং এ তখন জাঁদরেল পুলিশ অফিসার কর্নেল সেনগুপ্ত কলকাতা থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে বড় মেয়ে হিয়াকে। পড়াশোনার নাম করে গেছে তো গেছে আর ফেরার নাম নেই। বিয়ের চিন্তা শুরু হয়েছে বাবার। একের পর এক ছেলে দেখছে আর একের পর এক ছেলে রিজেক্ট করেই চলেছে হিয়া। ফাইনালি পাকা দেখা ঠিক হলো সূর্য আর হিয়ার। হিয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই বিয়েটা করার। ওদিকে শাওন চেষ্টায় আছে কিভাবে ভাঙা যায় বিয়েটা। মাঝে সূর্য প্রথম দেখায় ভালোবেসে ফেলেছিল হিয়ার ছোট বোন ঝিলিককে। কিন্তু পরে যখন জানতে পারে ঝিলিক মেয়ে নয়, মেয়ে আসলে হিয়া তখন ঝিলিক বাদে আবার হিয়ার প্রেমে পড়ে যায় তৎক্ষণাৎ। ৬৭ টা বিয়ে ক্যানসেল হওয়ার পর সূর্যর জীবনে এখন দুটো ক্রাইটেরিয়াই রয়ে গেছে। জীবিত আর মেয়ে হলেই চলবে।
বিয়ে ভাঙার তাল করে শাওন হিয়া কে নিয়ে আসে বাইরে একান্তে কথা বলতে। হিয়াকে শাসিয়ে দেয় বৌদি বলতে পারবে না। শাওন ওদের সাথেই থাকবে। সূর্যর সাথে মদ খেতে বসলে বাধা দেওয়া যাবে না। ঘুরতে যেতে হবে। সূর্যের তখন মাথায় হাত- এই বিয়েটাও গেল। আর ঠিক তখনই সবাইকে অবাক করে দিয়ে হিয়া চেয়ে বসে একটা সিগারেট। আর রাজি হয়ে যায় বিয়েতে। আর এমনি ইচ্ছে ছিল। বন্ধুদের সাথে থাকবে, ঘুরবে ফিরবে। এই বয়সে সংসার করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই ওর। তারপর হিয়া একের পর এক বলতে থাকে ওর জীবনের ইচ্ছে আর তখনই ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে শাওন প্রেমে পড়ে যায় হিয়ার। প্রথম প্রেম।
শাওন আপাতত ভয়ঙ্কর ঝামেলায়। বন্ধু না প্রেম! কোনটা বাঁচবে? প্রথম প্রেমটা কি হয়ে উঠবে?
কথায় কথায় বন্দুক চালানো কর্নেল সেনগুপ্ত সব জেনে ফেললে শাওন এর মাথায় ঠিক কটা গুলি করবে?
আর সবচেয়ে বড় কথা, মেয়ে দেখেই প্রেমে পরে কবিতা লিখে ফেলা সূর্যর কি আর বিয়ে হবে ফাইনালি! সব উত্তর নিয়ে আসছে আট থেকে আশি- সবার জন্য হাসি মজার এই সিরিজ.
অভিনয়ে- সন্দীপ ভট্টাচার্য, সবুজ বর্ধন, দুর্বার শর্মা, পিয়া দেবনাথ, দিশা ভট্টাচার্য, উজ্জয়িনী দেব
চিত্রগ্রাহক- ঋতম ঘোষাল
মুখ্য সহকারী পরিচালক- অন্তিম
আবহ সংগীত- প্রাঞ্জল দাস
সম্পাদক- পীযূষ ঘোষ
পোশাক- রঞ্জনা গাঙ্গুলি
সাজ সজ্জা- সুইটি দাস
গনমাধ্যম প্রচার: রানা বসু ঠাকুর
পরিচালক শুভাঞ্জন বসু
উত্তরবঙ্গের চালসায় আমার জন্ম আর বেড়ে ওঠা। তাই প্রথম থেকেই ইচ্ছে ছিল বাইরের চোখে উত্তরবঙ্গ নয়, একদম আমাদের গল্প বলার। তাই আমি প্রথম সিরিজে বেছে নিয়েছি শিলিগুড়ি, কার্শিয়াং আর জলপাইগুড়ির কয়েকজন বাসিন্দার গল্প। আর বেশ কিছু কাজ করার পর মনে হয়েছিল আমাদের বাঙালির সেই হারিয়ে যাওয়া সিনেমার গল্প- যেই গল্পে হাসি, মজা, আনন্দ ভরপুর ছিল। যেমন ‘গল্প হলেও সত্যি’ বা ‘মৌচাক’ বা ‘বসন্ত বিলাপ’ এবং আরও অনেক। নিখাদ তরুণ মজুমদার, তপন সিনহার সিনেমা যা এখনও আমরা মিস করি- সেই আমেজের গল্প যদি ফিরিয়ে আনা যায়।
সেই মিস করা থেকেই এই গল্পটা লেখা। যেই গল্পটা সপরিবারে একসাথে বসে জমিয়ে দেখার মতন একটা সিনেমা। ভালো খারাপ সবই তো দর্শকের হাতে। কিন্তু আমি আমার গল্পটা পরিবারের সবাইকে শুনিয়ে বেশ মজা দিয়েছিলাম। আর তারপরই অদ্ভুত ভাবে গল্পটা ভালো লেগেছিল ক্লিক এর কর্ণধারদের। সেখান থেকেই একদম নতুন লেখক পরিচালককে সুযোগ দেওয়া। আর তারপর একের পর এক প্রশ্রয় দিয়ে উত্তরবঙ্গের এক সিনেমাপ্রেমীকে স্বপ্ন পূরণ এর সুযোগ করে দেওয়া। জয়দীপ ব্যানার্জি অনেকটা গাইড করেছে আমাদের সৃজনশীল নির্দেশক হিসেবে ।
এইবার গল্প লিখলেই তো আর সবটা হয়ে যায় না। সেই স্বপ্ন পূরণের জন্যেই চাই শুটিং এর প্রচুর কাঁচামাল। অভিনয়ে সেই স্বপ্নপূরণগুলো সবুজ বর্ধন, দুর্বার শর্মা, সন্দীপ ভট্টাচার্য, পিয়া দেবনাথ, দিশা ভট্টাচার্য এবং উজ্জয়িনী দেব মুখার্জি- ভরিয়ে দিয়েছে। নবাগত হলেও চোখের সামনে দেখতে পেয়েছি- কীভাবে নিজ প্রতিভায় সবাই আমার গল্পের চরমতম রূপ দিতে পেরেছে। এডিট টেবিলে বসে আমি নিজেই হা হা করে হেসেছি।
অনেকটা স্বপ্ন নিয়ে এসেছিলাম কলকাতায় সিনেমা বানানোর লোভে। সেই লোভে প্রথম স্বাদ ফেলে গেল সবাই এবং অবশ্যই ক্লিক। ‘আমি এটা ভেবেছি’ থেকে ‘ভেবেছে যখন দাও’- এই বড় কথাটা বলার মধ্যেও যেই সাহস বা ভালোবাসাটা লাগে সেটা আমায় দিয়েছে ক্লিক। কতটা ফিরিয়ে দিতে পেরেছি এ তো সময় আর দর্শক বলবে।
কিন্তু আমার এই স্বপ্নপূরণের হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা হয়ে থেকে যাবে গত দুমাসের যুদ্ধের মতো শুটিং আর ক্যামেরার আড়ালে থেকে যাওয়া ক্লিক এর সমস্ত কর্মীবৃন্দরা…