Home » কলের গান, ক‍্যাসেট, সিডি  এখন সব অতীত। বিপন্ন সঙ্গীত জগতের ভবিষ্যৎ কি?

কলের গান, ক‍্যাসেট, সিডি  এখন সব অতীত। বিপন্ন সঙ্গীত জগতের ভবিষ্যৎ কি?

বর্তমান প্রজন্মের কাছে গ্রামোফোন বা কলের গান একেবারেই অচেনা। ফুরিয়ে যাচ্ছে ক্যাসেটের দিনও। সিডিরও (কমপ্যাক্ট ডিস্ক) বিদায়ের সুর। তরুণরা এখন গান শোনে মোবাইল ফোন, কম্পিউটার ও এমপি থ্রি প্লেয়ারে।

জানা যায়, শব্দ সংরক্ষণের জনক টমাস আলভা এডিসন। তিনি ১৮৭৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কাঠের বাক্সের ওপর চোঙা লাগানো এমন এক যন্ত্র আবিষ্কার করলেন । যার মধ্যে গোলাকৃতি এক বস্তুর ওপর চাকতির মধ্যে পিন লাগিয়ে ঘোরালে শব্দ উৎপন্ন হয়। এডিসন তার প্রিয় কবিতা ‘মেরি হ্যাড এ লিটল ল্যাম্প’ পাঠ করে রেকর্ডে ভরে উদ্বোধন করলেন যন্ত্রের। নাম দিয়েছিলেন ‘ফনোগ্রাফ।

বছর দশেক পর জার্মানির বিজ্ঞানী বার্নিলার টিনফয়েল আধুনিক করে মোমের রেকর্ড বানিয়ে নাম দেন গ্রামোফোন। তারপর মাটির রেকর্ড থেকে প্লাস্টিকের সুতায় ঘূর্ণন রেকর্ড। এডিসনের পোষা প্রিয় কুকুরকে গ্রামোফোনের চোঙের সামনে বসিয়ে মনোগ্রাম করে নামকরণ হয় ‘হিজ মাস্টার্স ভয়েস’ সংক্ষেপে এইচএমভি। ১৮৯৮ সালে জার্মানিতে গড়ে ওঠে বিশ্বের প্রথম গ্রামোফোন কোম্পানি। গত শতকের ষাটের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত মাগুরাসহ অনেক বনেদী পরিবারে গ্রামোফোন বাজত। এখন পুরনো কয়েকটি পরিবারের ড্রয়িংরুমে শো-পীচের জায়গা দখল করে আছে দু-একটি গ্রামোফোন রেকর্ড।

এর পরেই আসে কমপ‍্যাক্ট ক‍্যাসেট এর যুগ। লৌ ওট্টেনের এই আবিস্কার পৃথিবীতে সব থেকে বেশী রাজত্ব করেছিল বলেই ধারনা করা হয়। কমপ‍্যাক্ট ক‍্যাসেট পাওয়া যেত যথাক্রমে ৩০, ৬০ ও ১২০ মিনিটের। এই কমপ‍্যাক্ট ক‍্যাসেটের ওপর নির্ভর করেই ভারতে বেশ কয়েকটি মিউজিক কোম্পানি খুলে যায়। যেমন এইচ এম ভি, টিপস্, টি -সিরিজ ইত‍্যাদি। রেকর্ডের থেকে দাম তুলনা মূলকভাবে কম, আকারে ছোট এবং বৈদ‍্যুতিক সাহায্য ঘন্টার পর ঘন্টা চালানোর সুবিধার্থে এই কমপ‍্যাক্ট ক‍্যাসেট ও ক‍্যাসেট প্লেয়ার খুব সহজেই বাজার দখল করে।

   

প্রাচ‍্য ও পাশ্চাত্য দেশের সব বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পীরা সেই সময় মিউজিক কোম্পানি গুলি ও নিজস্ব উদ্যোগে রিলিজ করতেন একের পর এক কালজয়ী গানের ক‍্যাসেট। প্রযুক্তির কল্যাণে ক্যাসেটের যুগ বিলুপ্ত হয়েছে।

এরপর এল সিডির যুগ। জেমস রাসেলের আবিস্কৃত এই কম্প‍্যাক্ট ডিসক্ স্বল্পদিনেই নতুন রুপ ধারন করে যা বাজারে এম পি থ্রি নামে পরিচিত হয়। এই এম পি থ্রি ডিসক্ এ এক সাথে ১০০ থেকে ১৫০ গান রেকর্ড রাখার সুবিধা মানুষকে ভীষন আকর্ষণ করে এবং কম্প‍্যাক্ট ক‍্যাসেটের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে সাম্রাজ্য বিস্তার করে।

এখানে আর ক‍্যাসেটের ফিতে জড়িয়ে যাবার ভয়নেই, প্রয়োজন মতো গান একটি ইশারায় চলতে থাকে, ধৈর্য্য ধরে ফিতে গুটিয়ে আগে বা পিছনে নিয়ে যেতে হয়না।
কিন্তু এখানেই শুরু হয় চৌর্যবৃত্তি। এই কম্প‍্যাক্ট সিডিতে গান কম্পিউটারের মাধ‍্যমে রাইট করে বা রেকর্ড করে বহু মানুষ বেআইনিভাবে অর্থ উপার্জন করতে শুরু করেন। যা প্রায় অপ্রতিরোধ‍্য হয়ে ওঠে। ক্রমেই আসল সিডির বিক্রি কমে যায়।

এটা খুব বেশি সুখকর ছিল না অডিও ইন্ডাস্ট্রির জন্য। প্রযুক্তির সুফলের পাশাপাশি এর অপব্যবহারও বাড়ল। পাইরেসির ধাক্কায় সিডির ব্যবসা যখন শূন্যে, ঠিক সে সময়ে নতুন মাধ্যম হিসেবে এল ইউটিউব।

কিন্তু কোথাও যেন গানের সেই সুদিন গুলো ধীরে ধীরে হারিয়ে গেছে। আগে যেমন দুর্গা পূজার সময় অনেক শিল্পীরাই তাদের গানের ক্যাসেট, সিডি বের করতেন। কিন্তু এখন ইউটিউব ও গানের বিভিন্ন অ্যাপ আসায় সেগুলি বন্ধ হয়ে গেছে। কালক্রমে শিল্পীদের আয়ের উৎস বন্ধ হয়েছে কিন্তু মিউজিক কোম্পানি গুলির রোজগার করার জায়গা খুলে গিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Click to Go Up
error: Content is protected !!