১৪ নভেম্বর, পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর জন্মদিনে শিশু দিবস , দেশ জুড়ে পালিত হচ্ছে শিশু দিবস। দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে শিশুদের গুরুত্বকে মনে করেই এই দিনটি পালিত হয়।
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় পালিত হয়ে থাকে। শিশু দিবসটি প্রথমবার ১৯২০ সালের ২৩ এপ্রিল তুরস্কে পালিত হয়েছিল। বিশ্ব শিশু দিবস ২০ নভেম্বর-এ উদ্যাপন করা হয়, এবং আন্তর্জাতিক শিশু দিবস জুন ১ তারিখে উদ্যাপন করা হয়। তবে বিভিন্ন দেশে নিজস্ব নির্দিষ্ট দিন আছে শিশু দিবসটিকে উদ্যাপন করার।
স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু শিশুদের কাছে ছিলেন প্রিয় “চাচা নেহেরু”। অন্যদিকে জওহরলাল নেহরুও ছোটদের সঙ্গে সময় কাটাতে খুব ভালোবাসতেন। জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসংঘ ১৯৫৪ সালের ২০ নভেম্বর দিনটিকে শিশু দিবস হিসাবে পালনের জন্যে ঘোষণা করেছিল। সেই ঘোষণা অনুযায়ী ভারতেও ২০ নভেম্বর শিশু দিবস হিসাবে পালন করা হত। তবে ১৯৬৪ সালের ২৭ মে,পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর প্রয়াণের পর শিশুদের প্রতি তার চরিত্রের এই বিশেষ দিকটিকে স্মরণে রেখে সর্বসম্মতভাবে তার জন্মদিনটি ভারতে শিশু দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তারপর থেকেই প্রতিবছর ১৪ নভেম্বর দিনটি শিশু দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।
দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে শিশুদের গুরুত্বকে মনে করেই এই দিনটি পালিত হয়। এছাড়াও,এই দিনে শিশুদের অধিকার সম্পর্কে সব মানুষকে আরও সচেতন করার চেষ্টা করা হয়। শিশুরা যাতে সঠিক শিক্ষা পায়, দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে শিক্ষা পায় সে ব্যাপারেও প্রচার করা হয় এই দিনটিকে উপলক্ষ করে। পাশাপাশি শিশুদের সঠিক পুষ্টির প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরা হয়। দেশের স্কুলগুলিতে এই দিনটিতে পড়াশুনোর পরিবর্তে নানা রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কোথাও আবার শিশুদের পিকনিকে নিয়ে যাওয়া হয়। ছোটো বাচ্চাদের হাতে এই দিনটিতে তুলে দেওয়া হয় নানা উপহারও। সব মিলিয়ে ভারতে১৪ নভেম্বর (Children’s Day) পুরোপুরিই শিশুদের দিন। তবে সব দেশেই শিশু দিবস পালনের উদ্দেশ্য একটাই, দেশের শিশুদের অধিকার ও তাঁদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতনতার বার্তা দেওয়া।
২০১১ সালে, ভারতের জাতীয় আদমশুমারিতে দেখা গেছে যে ভারতে [৫-১৪] বছর বয়সী মোট ২৫৯.৬৪ মিলিয়ন শিশুদের মধ্যে শিশুশ্রমিকের মোট সংখ্যা ১০.১ মিলিয়ন হবে । শিশুশ্রম সমস্যা শুধু ভারতেই আছে এমন নয়; বিশ্বব্যাপী, প্রায় ২১৭ মিলিয়ন শিশু প্রতিনিয়ত কাজ করে, অনেকেই পূর্ণকালীন সময় কাজ করে।
শিশু ও কিশোরী শ্রম (নিষিদ্ধকরণ ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ১৯৮৬ অনুযায়ী,যা ২০১৬ সালে সংশোধন করে (“সিএলপিআর অ্যাক্ট”) করা হয়েছে, এই আইন অনুযায়ী, একটি “শিশু” ১৪ বছরের কম বয়সী ব্যক্তি হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, এবং সিএলপিআর আইন গার্হস্থ্য সাহায্য সহ যেকোনো ভাবে একটি শিশুর কাজ করাকে নিষিদ্ধ করে । শিশুকে যে কোন কাজে নিয়োগ করা একটি বিবেচ্য অপরাধ। ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিশুদের “কিশোর” হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং এই আইনটি কিশোর -কিশোরীদের বিপজ্জনক তালিকাভুক্ত পেশা এবং প্রক্রিয়াগুলি ছাড়া অর্থাৎ খনির, দাহ্য পদার্থ এবং বিস্ফোরক সম্পর্কিত কাজ এবং কারখানা আইন ১৯৪৮ অনুসারে অন্য যে কোনও বিপজ্জনক প্রক্রিয়াকে বাদ দিয়ে কাজ করার অনুমতি দেয়। ২০০১ সালে, সমস্ত শিশুশ্রমিকদের মধ্যে আনুমানিক ১% শিশুশ্রমিক, অথবা ভারতের প্রায় ১,২০,০০০ শিশু বিপজ্জনক কাজে নিয়োজিত ছিল। উল্লেখযোগ্যভাবে, ভারতের সংবিধানে অনুচ্ছেদ ২৪ এর অধীনে মৌলিক অধিকার হিসাবে বিপজ্জনক শিল্পে (কিন্তু বিপজ্জনক নয় এমন শিল্পে নয়) শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করা হয়েছে।ইউনিসেফ অনুমান করে যে, বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশ ভারতে ১৪ বছরের কম বয়সী শ্রমিকদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, যখন সাব-সাহারান আফ্রিকান দেশগুলিতে শতাংশ হিসেবে নিযুক্ত শিশুশ্রমিকদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশন অনুমান করে যে, বিশ্বের ৬০ শতাংশ শিশুশ্রমের সবচেয়ে বড় নিয়োগকারী বিভাগ হল কৃষি, যখন জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার অনুমান ৭০% শিশুশ্রম কৃষি এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাজে নিয়োজিত। কৃষির বাইরে, ভারতীয় অর্থনীতির প্রায় সব অনানুষ্ঠানিক খাতে শিশুশ্রম পরিলক্ষিত হয়।
ধীরে ধীরে শিশু শ্রমিক নিবন্ধিকরণ করতে হবে, এবং ভারতের প্রত্যেকটি শিশু যাতে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হয় ও প্রকৃত মানুষ হতে পারে সেটির দায়িত্ব দেশের জনগনকেই নিতে হবে এবং সুব্যবস্থা করতে হবে। কারণ তারাই হয়ে উঠবে দেশের ভবিষ্যৎ। তখনই আমাদের দেশের উন্নতি হবে এবং অশিক্ষার হার কমবে। তাই আমাদের সকলের প্রচেষ্টা একান্ত কাম্য। তাই আজকের দিনটা সেই সকল শিশুর জন্য যারা আজও শিশু শ্রমের দায়ে চাপা পড়ে আছে, যাদের কাছে শিক্ষার আলো এখনো পৌঁছায়নি। শিশুরা যেন তাদের কোনো অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয় এটিই এখন আমাদের একমাত্র কামনা।
বন্ধ হোক শিশু শ্রম, গড়ে উঠুক নতুন সমাজ
সেই কারণেই শিশু দিবস, শুনতে কি পাচ্ছো চাচা নেহেরু-র আওয়াজ?
Your article helped me a lot, thanks for the information. I also like your blog theme, can you tell me how you did it?