Advertise your brand here -Contact 7603043747 (Call & Whatsapp)

মানসিক অবসাদ গ্রস্থ মানুষ থেকে বৃদ্ধাশ্রম ও অনাথ আশ্রমের মানুষদের নতুন করে বাঁচার লড়াই শিখিয়ে, “অনন‍্যা সম্মান ২০২৩” এ মনোনীত দীপশিখা দত্ত।

Table of Contents

Share Our Blog :

Facebook
WhatsApp

দীপশিখা দত্ত, নামের মধ‍্যেই লুকিয়ে রয়েছে শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাবার অদম‍্য শক্তি ও সাহসের উৎস। আসলে আমাদের আশে পাশেই এরকম অনেক লড়াকু মানুষ আছেন যাদের জীবন সম্পর্কে জানলে হয়তো বহু মানুষ অবসাদে না ভুগে নতুন করে বাঁচতে শিখবেন। দীপশিখা দিও ঠিক এই কথাটাই বলেন…. “একটু বেঁচে থাকতে অনেক টাকার দরকার নেই, সামান‍্য টাকা থাকলেই জীবন টাকে কাটিয়ে ফেলা যায়”।

মানসিক অবসাদ গ্রস্থ মানুষ থেকে বৃদ্ধাশ্রম ও অনাথ আশ্রমের মানুষদের নতুন করে বাঁচার লড়াই শিখিয়ে, "অনন‍্যা সম্মান ২০২৩" এ মনোনীত দীপশিখা দত্ত।

কথাটা ছোট হলেও দীপশিখা দির এই মহৎ উদ্যোগ আর উদ্দেশ‍্য যে কতটা বৃহৎ তা তার থেকেই আমরা জানতে চেয়ে ছিলাম। অবসর প্রাপ্ত শিক্ষিকা দীপশিখা দি নিজেকে ব‍্যাস্ত রেখেছেন তার বিশালাকার কর্মকান্ডের মধ‍্যেই। সেই ব‍্যস্ততার মধ‍্যে থেকেই তিনি আমাদের জানালেন…..

২০১২ সালে হাজব্যান্ডের আকস্মিক মৃত্যু আমাকে সম্পূর্ণভাবে নাড়িয়ে দেয়। একজন কলেজ ও একজন স্কুল পড়ুয়া দুই মেয়ে ও অসুস্থ শাশুড়িকে নিয়ে শুরু হয় আমার জীবন সংগ্রাম। আমি বিয়ের আগে থেকেই কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে চাকরি করতাম বলে আমার স্বামী কর্মরত অবস্থায় মারা গেলেও রেল কোনরকম এক্সিডেন্টাল বেনিফিট আমাদের দেয়নি এবং প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হয়েও আমার মেয়েকে চাকরি দেয়নি। স্বামীর অকাল মৃত্যুর পর সমাজ সংসারের যাবতীয় আক্রোশ যেন আমার উপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসলো। আমাকে জোর করে একাদশী পালন করতে, সাদা কাপড় পড়তে বাধ্য করা হয়েছিল, কিন্তু আমি তখন বিদ্রোহ ঘোষণা করি। কারণ আমার মনে হয়েছিল, আমার স্বামী কোনোদিন আমাকে এইরূপে দেখতে চাননি।আর তাছাড়া আমার মনে হয়েছে একমাত্র সিঁদুর ছাড়া জীবনের বাকি লালরংগুলো তিনি আমার জীবনে আসার আগেও তো ছিলো, তাহলে সে চলে যেতে কেন আমার জীবন থেকে লাল রং কেড়ে নেওয়া হবে?

মানসিক অবসাদ গ্রস্থ মানুষ থেকে বৃদ্ধাশ্রম ও অনাথ আশ্রমের মানুষদের নতুন করে বাঁচার লড়াই শিখিয়ে, "অনন‍্যা সম্মান ২০২৩" এ মনোনীত দীপশিখা দত্ত।

একজন বিধবার কেন নিজের মতো করে বেঁচে থাকার অধিকার থাকবে না? সমাজ কেন ঠিক করে দেবে সে কি করবে আর কি করবে না? ক্রমশঃ এইসব ভাবনা আমাকে ডিপ্রেশনের দিকে নিয়ে যাচ্ছিল, তখন আমার মেয়েরা আমাকে বোঝায় বলে, “তুমি তো নিজের কলেজ লাইফে লেখালেখি করতে, আবার লেখালেখি শুরু করো।” ওদের কথামতো পুরানো ডায়েরীতে কিছু কিছু করে ছোটো গল্প লেখা শুরু করি। ক্রমশঃ সেগুলো ম্যাগাজিন ও বই আকারে অন্যদের লেখার সাথে ছাপার অক্ষরে বের হয়। তারপর বাজারে স্মার্টফোন আসায় ফেসবুকে লেখালিখি শুরু করে আমি সম্মানিত হতে থাকি আমার গল্পের বিষয়বস্তু বেশিরভাগ সময়ই থাকে সমাজচেতনার বার্তাবাহী ও কুসংস্কারের বিরোধী বিষয়বস্তু।

মানসিক অবসাদ গ্রস্থ মানুষ থেকে বৃদ্ধাশ্রম ও অনাথ আশ্রমের মানুষদের নতুন করে বাঁচার লড়াই শিখিয়ে, "অনন‍্যা সম্মান ২০২৩" এ মনোনীত দীপশিখা দত্ত।

সেই সময় একই সাথে ফেসবুকের মাধ্যমে শুরু হয় সমাজসেবামূলক কাজকর্ম করা এবং সোশ্যাল ট্যাবু থেকে বেরিয়ে নিজস্ব চিন্তাভাবনার বিকাশ করার চেষ্টা। সর্বপ্রথম আমি নিজেকে দিয়েই শুরু করি। বিধবাদের সামাজিক অনুষ্ঠানে এক ঘরে করার নিয়ম পুরুষেরই তৈরী তাই কোনো পুরুষ অভিভাবক ও পুরুষ পুরোহিতের সাহায্য ছাড়াই মেয়ের বিয়ে দিলাম মহিলা পুরোহিত আচার্যা নন্দিনী ভৌমিককে দিয়ে। কোনরকম সম্প্রদান গোত্রান্তর, কনকাঞ্জলি ছাড়াই সামাজিক নিয়মমতে বৈদিক মন্ত্রোচ্চারণের দ্বারা মেয়ের বিয়ে দিই। মফস্বলের বুকে এধরণের বিয়ে দেবার ধ্যানধারণা দেখানোর দুঃসাহসিক পদক্ষেপ প্রথম আমিই দেখাই।

মানসিক অবসাদ গ্রস্থ মানুষ থেকে বৃদ্ধাশ্রম ও অনাথ আশ্রমের মানুষদের নতুন করে বাঁচার লড়াই শিখিয়ে, "অনন‍্যা সম্মান ২০২৩" এ মনোনীত দীপশিখা দত্ত।

করোনার আগে থেকেই অসহায় শিশু ও বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের সাহায্যের জন্য অনলাইনে টাকা পাঠিয়েছি।প্রথমদিকে আমি অল্প অল্প টাকা পাঠাতাম অসহায় দুঃস্থ মেয়েদের লেখাপড়া ও জীবনধারণের জন্য। তারপর ধীরে ধীরে কাজের ফাঁকে ফাঁকে আমি নিজে বিভিন্ন অনাথ আশ্রমে ও বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে কিছুটা সময় কাটানো শুরু করলাম ওনাদের অসুবিধাগুলো জানবার জন্য। এইভাবে সব সময় আর্থিকভাবে না হলেও মানসিকভাবে তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করলাম।

কখনো কখনো মেয়েদের জন্য কিছু স্যানিটারী ন্যাপকিন, সাবান, শ্যাম্পু, বিস্কুট পাঠিয়েছি। অনাথ আশ্রমে বাচ্চাদের খাতাপত্র, জামাকাপড়, ওষুধ দিয়েছি। বড়ো মেয়েদের একটি সেলাই মেশিন দিয়ে তাদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করার ব্যবস্থা করেছি। কখনো তিন চার মাস পরপর আমি বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে নিজের পছন্দমতো পদ রান্না করিয়ে খাইয়ে আসি। শুধু আমি নিজে নই আমার আত্মীয়-স্বজনদেরকেও ওনাদের সঙ্গে সময় কাটানোর জন্য ডাকি। এভাবে আমার এলাকা ও তার আশেপাশের বেশ কিছু বৃদ্ধাশ্রম ও অনাথ আশ্রমে আমার নিয়মিত যোগাযোগ গড়ে ওঠে। পূজোর সময় আশ্রমের মেয়েদের একরকমের ছিটকাপড় কিনে জামা বানিয়ে দিয়েছি।

মানসিক অবসাদ গ্রস্থ মানুষ থেকে বৃদ্ধাশ্রম ও অনাথ আশ্রমের মানুষদের নতুন করে বাঁচার লড়াই শিখিয়ে, "অনন‍্যা সম্মান ২০২৩" এ মনোনীত দীপশিখা দত্ত।

গতবছর ডিসেম্বরে আমার এক ডাক্তার বন্ধুকে নিয়ে ব্যারাকপুরের বৃদ্ধাশ্রমে বিনামূল্যে মেডিকেল ক্যাম্প করাই। সেখানে প্রত্যেকের ঠিকঠাক মেডিকেল চেকআপ ও প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বর্তমানে কৃষ্ণনগর স্টেশন এর কাছে এক শিক্ষক ভাই ভবঘুরেদের খাবারের সংস্থান করেন রোজকার জন্য। সেখানেও নিজের সাধ্যমত অর্থ সাহায্য পাঠাই।

কৃষ্ণনগরের কাছাকাছি আদিবাসী পাড়ায় ছোট বাচ্চাদের জন্য স্কুল খোলার চেষ্টা চলছে। সেই বাচ্চাদের জন্য পুষ্টিকর খাবার দুধ এবং জামাকাপড়, স্কুল খোলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার কারণে ভাইয়ের সাথে রয়েছি।
এ সমস্ত যোগাযোগ ফেসবুক থেকেই হয়েছে করোনা কালে যখন মানুষ ছিল একান্ত অসহায় ও গৃহবন্দী। সেই সময় বিধবা মহিলাদের প্রতি সামাজিক অবিচারের বিরুদ্ধে কিছু লেখা পড়ে একজন অনলাইন সাংবাদিক আমার সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি আমাকে সোশ্যাল দুর্গাপূজা তথা নিউজপেপার ব্যাংক নামক এক সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের জন্য এগিয়ে আসতে বলেন। সেখানে বলা হয়েছে বাড়ীর পুরানো খবরের কাগজ বিক্রির ২০% টাকা মাসে একদিন জমা দিয়ে একটি ফান্ড তৈরী করতে বলেন, সেটি পাড়ার দুঃস্থ মানুষের সাহায্যের কাজে ও পাড়ার উন্নয়নের কাজে ব্যয় হবে। এই কাজের জন্য বাড়ির মা-বোনদের এগিয়ে আসার জন্য আহ্বান করেন। আমি এই কর্মকাণ্ডে যুক্ত থেকে এভাবেই মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে চাই। যাতে অনেক ছোট বড় সমস্যার সমাধান আমরা নিজেরাই করে উঠতে পারবো।

আমি আমার পাশে, এইরকম আরো অনেক সিনিয়র সিটিজেনদের চাই যারা অবসর জীবনের একঘেয়েমি থেকে বেরিয়ে এসে হাতে হাত রেখে সমাজকল্যাণের কাজে আমাদের সাথে যুক্ত হোন।

আসলে সমাজের হত দরিদ্র বা পিছিয়ে পড়া মানুষের পাশে কেউ থাকতে চায়না। তাদের ভালো মন্দ ভাবার সময় কারো নেই। তাই এই সব প্রান্তিক মানুষদের ভালো রাখার, তাদের জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার দায় ভার তুলে নিয়েছেন দীপশিখা দি নিজেই। তার এই অনবদ‍্য উদ্যোগ ও কঠিন লড়াইয়ে আপনারাও সামিল হতেই পারেন।

দ‍্যা ইন্ডিয়ান ক্রনিকেলস আয়োজিত “অনন‍্যা সম্মান-২০২৩ ” এর গর্বিত বিজয়ী হলেন দীপশিখা দত্ত। সাথে গর্বিত আমরাও।

More Related Articles

সম্পাদকীয়
কেশরী চ্যাপ্টার ২: এক সিনেমা, এক ইতিহাস, আর তাতে লেগে থাকা একরাশ বিতর্ক

অক্ষয় কুমারের ‘Kesari Chapter 2’ মুক্তির আগেই ঘিরে ধরল বিতর্ক—কবিতার লাইন চুরি, ইতিহাস বিকৃতি আর অশালীন সংলাপ নিয়ে জোর সমালোচনা! একঝলকে দেখে নিন ঘটনাপ্রবাহ।

Read More »
mamata banerjee
সংবাদ ও রাজনীতি
গরিবের পাশে দাঁড়াল আদালত! ফের শুরু হবে ১০০ দিনের কাজ, মমতার কণ্ঠে তীব্র ক্ষোভ ও আশার সুর

কলকাতা হাই কোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে ১ আগস্ট থেকে পশ্চিমবঙ্গে আবার চালু হবে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্প। নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গরিবের ন্যায্য অধিকার কেড়ে নিতে দেওয়া হবে না”, কেন্দ্রকে কড়া বার্তা দিয়ে জানালেন, “সংবিধান হত্যা দিবস ঘোষণা গণতন্ত্রের অপমান”।

Read More »
বিশেষ খবর
আন্দামান সাগরে বিশাল তেলক্ষেত্রের ইঙ্গিত! গাইয়ানার মতো আবিষ্কার হলে বদলে যেতে পারে ভারতের এনার্জি ভবিষ্যৎ

🛢️ গাইয়ানার পথেই ভারত? আন্দামান সাগরে মিলতে পারে বিপুল পরিমাণ তেল! আন্দামান সাগরের নিচে রয়েছে বিশাল সম্ভাবনা। ভারতের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী হরদীপ সিং

Read More »
monsoon in bengal
বিশেষ খবর
কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে অতিভারী বৃষ্টি, বজ্রঝড় ও ঝড়ো হাওয়ার সতর্কতা – জারি রেড ও অরেঞ্জ এলার্ট

কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় জারি হয়েছে রেড ও অরেঞ্জ অ্যালার্ট। বজ্রবিদ্যুৎ ও ঝড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নিম্নচাপ ও সাইক্লোনিক সার্কুলেশনের কারণে আগামী কয়েক দিন ভারী বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হতে পারে জনজীবন।

Read More »
error: Content is protected !!