বিশেষজ্ঞদের কথায়, এডিস ইজিপ্টাই মশার কামড়ে হয় ডেঙ্গি। এক্ষেত্রে সব এডিস মশা নয়, বরং সংক্রামিত এডিস মশা কামড়ালে ডেঙ্গি হয়ে থাকে। এবার মশাবাহিত এই রোগটি ভাইরাস থেকে হয়। সেই ভাইরাস সুস্থ মানুষকে সংক্রামিত করলে মানুষের দেহে ফুটে ওঠে লক্ষণ।
ডেঙ্গু হ্যামারেজিক জ্বরকে ‘গুরুতর ডেঙ্গু’ হিসেবে ধরা হয়। মশা দ্বারা পরিবাহিত ভাইরাল সংক্রমণের কারণে হওয়া এই ডেঙ্গু জ্বর কখনো কখনো প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে, যাকে ডেঙ্গু হ্যামারেজিক জ্বর বলা হয়। ডেঙ্গু হ্যামারেজিক জ্বর প্রথমবার দেখা যায় ১৯৫০’এর দশকে, যখন ফিলিপিন্স ও থাইল্যান্ডে এই ডেঙ্গু জ্বর মহামারীর রূপ ধারণ করেছিল। আজকের দিনে এশিয়া ও ল্যাটিন অ্যামেরিকান দেশগুলিতে ‘গুরুতর ডেঙ্গু’র প্রভাব দেখা যায় এবং এটি বাচ্চা বা বয়স্কদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ও মৃত্যুর সম্মুখীন হওয়ার প্রধান কারণগুলির মধ্যে একটি। এর উপসর্গগুলি অনেকটাই ডেঙ্গু জ্বরের মতো কিন্তু এটি সাধারণ ডেঙ্গুর তুলনায় মারাত্মক হতে পারে। এটি সাধারণত তাদের মধ্যেই দেখা যায় যাদের একবারের চেয়ে বেশীবার ডেঙ্গু জ্বর হয়ে থাকে, তবে উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে ‘গুরুতর ডেঙ্গু’তে আক্রান্ত রুগী দ্রুত আরোগ্য লাভ করতে পারে।
‘শক সিন্ড্রোম’ হল ডেঙ্গু সংক্রমণের একটি ভয়াবহ জটিল অবস্থা এবং এতে মৃত্যুর হার অনেক বেশী। ডেঙ্গু শক’এর প্রারম্ভিক অবস্থা অনেক সময়ে বোঝা কঠিন হতে পারে, ধীরে ধীরে এটি মারাত্মক রূপ নিতে পারে। রুগী যদি ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোমের লক্ষণ ও উপসর্গগুলির বিষয়ে পর্যাপ্ত ধারণা থাকে, যেগুলি ডেঙ্গু হ্যামারেজিং জ্বরের পর হয়ে থাকে, তাহলে উপযুক্ত চিকিৎসার মাধ্যমে সে আরোগ্য লাভ করতে পারে।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে ফের বাড়তে শুরু করেছে ডেঙ্গি। একের পর এক মৃত্যু ঘটছে। ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য সরকার। চিকিৎসার পরিকাঠামোর স্তরে স্তরে ঘটছে পরিবর্তন। তবে মাথায় রাখতে হবে, শুধু সরকার কিছু করে উঠতে পারবে না। বরং ডেঙ্গি প্রতিরোধে মানুষকেও সচেষ্ট হতে হবে।
প্রতিবছর আমাদের রাজ্য সহ গোটা দেশে ফিরে ফিরে আসে ডেঙ্গি। আর এই কারণে সমস্যাও তৈরি হয়ে যায়। তবে দেখা গিয়েছে একটু সতর্ক থাকলেই এই সমস্যার অনায়াস সমাধান করা সম্ভব। ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য প্রথম পদক্ষেপ হল ডেঙ্গু ভাইরাস যেন আপনার শরীরে প্রবেশ না করতে পারে তার ব্যবস্থা করা, এবং এটি করা যেতে পারে এই রোগ পরিবহনকারী এডিস মশা থেকে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে সুরক্ষিত রেখে।
ডেঙ্গির লক্ষণ
১) চোখের পিছনে ব্যথা
২) মাথা ব্যথা
৩) র্যাশেস
৪) বমি বা বমি ভাব ইত্যাদি।
৫) পেশি, জয়েন্টে ব্যথা, হাড়ে ব্যথা
এছাড়া ডেঙ্গি গুরুতর হয়ে গেলেও সতর্ক হয়ে যান।
১) বমিতে রক্ত
২) দিনে ৩ বারের বেশি বমি
৩) খুব দুর্বলতা। এই লক্ষণ দেখলেই সতর্ক হয়ে যান।
৪) পেটে ব্যথা
৫) মাড়ি ও নাক দিয়ে রক্ত পড়া
ডেঙ্গু প্রতিরোধের উপায়
১) বাড়িতে মশা নিধন করতে হবে। আপনি চেষ্টা করুন মশা মারার তেল থেকে শুরু করে যাবতীয় কিছু ব্যবহার করার।
২) বাড়িতে মশারী টাঙিয়ে শোবেন। অথবা জানালাতে নেট লাগাতে পারেন।
৩) ফুলহাতা জামা পরুন এই সময়ে। চেষ্টা করুন ফুলপ্যান্ট পরার। তবেই মশা কামড়ানোর আশঙ্কা কমবে।
৪) শরীরের খোলা অংশ গুলিতে ওডোমস লাগাতে পারেন।
৫) ঘরের পাশাপাশি বাইরের খেয়ালও রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে চেষ্টা করুন যত শীঘ্র হয় বর্ষায় জমে থাকা জল ফেলে দেওয়ার। টব থেকে শুরু করে ঘরের কার্নিশ বা অন্যান্য জায়গা পরিষ্কার করে নিন। মশার্র লার্ভা দেখলে নষ্ট করুন।