Home » মনিকা থেকে গনিকার ডিজিটাল অর্থ উপার্জনে, বাঙালির আজ বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবস।

মনিকা থেকে গনিকার ডিজিটাল অর্থ উপার্জনে, বাঙালির আজ বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবস।

আজ বিশ্ব ফটোগ্রাফি দিবস। ভারতের অন‍্য জাতিদের তুলনায় বাঙালি ক‍্যামেরা চিনেছিল অনেক আগেই। আসলে বাঙালি বাবুদের অন‍‍ান‍্য শখের মধ‍্যে ছিল এই ক‍্যামেরা। কারন এই ক‍্যামেরা বস্তুটি মূলত ছিল বিদেশী সংস্কৃতি। ভারতে আজ অবধি কোন ক‍্যামেরা প্রস্তুতকারক সংস্থা শুরু হয়নি। ফলত সেই সময় বাজারে ক‍্যামেরা বলতে মানুষ এলাকার ফটোস্টুডিও গুলিকেই বুঝতো। মানব জীবনের জন্ম থেকে মৃত‍্যুর সময় ছবি তোলার জন‍্য ডেকে পাঠানো হত সেই এলাকার স্থানীয় ফটোগ্রাফার কে। মনোপলি ব‍্যাবসার ফলে সেই ফটোগ্রাফারদের সাধারণ মানুষ দিতেন এক রাজকীয় সম্মান।

Voigtlander Old Nostalgia Camera Antique

এরপরেই ভারতীয়রা বরং বলা ভালো বাঙালি ক‍্যামেরা চিনলো বা ক‍্যামেরার চর্চায় ফিরলো আশির দশকের প্রায় মাঝামাঝি যখন ভুপাল গ‍্যাস দূর্ঘটনা ঘটলো। একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকার হয়ে ভোপাল গ‍্যাস দূর্ঘটনার ছবি তুলেছিলেন  রঘু রাই। তার তোলা সেই ছবি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হবার পর রাতারাতি এতটাই চর্চায় এসেছিল যে তিনি রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে দেশবাসীর কাছে আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠেন। আর তৎকালীন এই আলোচনা থেকেই কলকাতার আর এক ফটোগ্রাফার কে বাঙালি খুঁজে পেল। বেনু সেন। কলকাতা জাদুঘরে কেরানি পদে চাকরী করে শুধুমাত্র ছবিকরা বা ফটোগ্রাফি কে ভালোবেসে শখের ফটোগ্রাফি চর্চা করে যেতেন। যদিও সেই সময় এরকম শখের ফটোগ্রাফি চর্চা বেনু সেন একা করতেন না। অনেকেই ছিলেন সেই সময়, কিন্তু তারা সীমিত পরিসীমার বাইরে সেই সময় অতটা পরিচিতি পাননি। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো শখের শিল্প চর্চা এই ভাবেই পিছিয়ে থাকে। যাইহোক বাঙালির  সেই শখের ফটোগ্রাফি চর্চার দৌলতে কলকাতায় বেশ কয়েকটি ফটোগ্রাফি ক্লাব তৈরী হয়েযায় যেখানে বেশ কিছু মানুষ ফটোগ্রাফি নিয়ে বেশ গুর গম্ভীর চর্চা করতেন। সেখানে নব‍্য বা খামখেয়ালি মানুষের প্রবেশ ছিল একেবারেই নিষিদ্ধ।

এরপরেই প্রায় নব্বইয়ের দশকে বাঙালির ঘরে এলো কম্পিউটার আর ইন্টারনেট। ডিজিটাল দুনিয়ার শুরুর দিক। ফিল্মরোল ক‍্যামেরার বাজার দখলে এলো ডিজিটাল ক‍্যামেরা। আকারে ছোট, এবং ফিল্মরোলের থেকে অনেক বেশী সংখ‍্যায় ছবি তোলাযায়। ফিল্মরোলের মতো সময় ও খরচ সাপেক্ষে কেমিক্যাল ডেভেলপমেন্ট করতে হয়না। কম্পিউটারের সাথে একটি তার দিয়ে ডিজিটাল ক‍্যামেরাটি সংযোগ করলেই ছবি সরাসরি ক‍ম্পিটারে দেখতে পাওয়া যায় এবং দরকারে প্রিন্ট ও করা যায় যা আগের থেকে অনেক সস্তা ও অল্প সময়েই সম্ভব। সাথে দোসর হয়ে আসে প্রথম সামাজিক মাধ‍্যম অরকুট। ডিজিটাল ফটোগ্রাফি সামাজিক ভাবে উন্মুক্ত ভাবে প্রকাশ‍্যে আসতে শুরু করে অরকুটেই আর এই অরকুটেই বিংশ শতাব্দীর শুরুতেই কিছু নব‍্য ফটোগ্রাফার কলকাতা জন্ম দেয় নতুন একটি ফটোগ্রাফি সংস্থা ক্রেজি ফটোমেটস্ যার প্রধান পরামর্শ দাতা ছিলেন স্বয়ং বেনু সেন, কাশীনাথ বসু, বিশ্বনাথ বসু, মহাদেব বাড়াই, বিখ্যাত চিত্র সাংবাদিক বিকাশ দাস সহ আরো অনেকে।

ক্রেজি ফটোমেটস্ এর ফটোগ্রাফি চর্চা ও ফটোগ্রাফি একটি পেশাগত শিক্ষার প্রচারে বাংলার বহু মানুষ আকৃষ্ট হন ডিজিটাল ফটোগ্রাফি তে। আজ যেহারে প্রতিটি বাড়িতে ফটোগ্রাফি চর্চা বা ডি এস এল আর ক‍্যামেরা কেনার ঝোঁক তা শুধুমাত্র এই ক্রেজি ফটোমেটস্ এর উৎসাহ উদ্দিপনার ফল। কিন্তু বাঙালির চিরকালীন অসংগঠিত মনোভাবের ফলে কালের করাল গ্রাসে কিছু বছরের মধ‍্যেই হারিয়ে যায় ক্রেজি ফটোমেটস্। তবে ফটোগ্রাফি চর্চা বেড়েই চলে।

শখের ফটোগ্রাফি চর্চার বিষয় গুলি যেমন ল‍্যান্ডস্কেপ, বার্ড ফটোগ্রাফি, নেচার ফটোগ্রাফি, স্ট্রীট ফটোগ্রাফি ইত‍্যাদি শিক্ষা ও গবেশনা মূলক বিষয় গুলি থেকে সরে গিয়ে বেশিরভাগ টাই শুরু হয় পেশাগত ফটোগ্রাফি নিয়ে। বিয়ে বাড়ির ছবি বা ক‍্যান্ডিড ওয়েডিং, ফ‍্যাশন ফটোগ্রাফি তে ছেয়ে যায় নতুন সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক। নুড ফটোগ্রাফি হয়ে যায় সহজ লভ‍্য। বর্তমান আধুনিক নারীরা ফ‍্যাশন দুরস্ত হতে নিজেকে ক‍্যামেরার সামনে নগ্ন ভাবে তুলে ধরতে সহজাত হয়ে ওঠেন যা অশ্লীলতার তর্কে মর্ডান আর্ট নামেই পরিচিত। যদিও ঘোমটার নিচে লুকিয়ে থাকা বাঙালি নারীদের উৎসাহ দিয়েছে স্মার্টফোনে থাকা আধুনিক ক‍্যামেরা। ফটোগ্রাফার ছাড়াই এই ফোনের ক‍্যামেরা ও এডিটিং ফিল্টার ব‍্যাবহার করে দারুন মনোমোহিনী ছবি হাতের মুঠো ফোনেই করা যায়।

এর পরেই আসে কোরনা। অজানা এই মহামারীর আতঙ্কে গৃহবন্দী হলো মানুষ। আর ভারতীয় দের গৃহবন্দী দশায় মনোরঞ্জন বাড়িয়ে গৃহেই আবদ্ধ রাখতে ফ্রিতে ইন্টারনেট পরিসেবা নিয়ে হাজির রিলায়েন্স গোষ্ঠী। গৃহবন্দী ও রোজগারহীন মধ‍্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষ ডিজিটাল ক‍্যামেরা, স্মার্টফোনের ক‍্যামেরাকে এই ফ্রি-র ইন্টারনেটে ব‍্যাবহার করে ডিজিটাল অর্থ উপার্জনের পথ তৈরী করেনিল। বাঙালিরাও স্রখানে পিছিয়ে রইলো না। একটু কষ্ট করে সাবসক্রাইবার দের ভীড় জমাতে পারলেই পকেটে ডলার এর পর ডলার চলে আসবে। আর নিষিদ্ধ বস্তু যদি বিশেষ মাধ‍্যমে উন্মুক্ত করে দেখানো হয় তাহলে তো দৃষ্টি আকর্ষণ হবেই।

কিছু নিম্ন মানষিকতার বাঙালি  মহিলা এখন সামাজিক মাধ‍্যম জুড়ে চালাচ্ছেন তাদের ডিজিটাল বেশ‍্যাবৃত্তি। লাখ লাখ সাবক্রাইবার দের অনুরোধ স্বল্প বসনা হয়ে চলে আসেন বিকৃত রসনা তৃপ্ত করতে। অবাক হতে হয় বর্তমান সমাজের প্রশাসন কে দেখেও। তারা এই ডিজিটাল অশ্লীলতা নিয়ে কোন রকম পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। ইউটিউব ফেসবুক ও অনান‍্য সামাজিক মাধ‍্যমে প্রাপ্তবয়স্ক ছাড়াও অনেক অল্প বয়সী কিশোর কিশোরীরাও এই একই পথে হাটতে শুরু করেছে।

অতএব বোঝাই যাচ্ছে, বর্তমানে বাঙালির ক‍্যামেরা প্রেম বাঙালিকে কতটা অধঃপতনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সামাজিক পরিকাঠামো কতটা দূর্বল হয়ে পড়ছে। পাড়ার উঠতি মঠেল মনিকা থেকে সোস‍্যালমিডিয়ার গনিকা সকলের প্রয়োজন একটা ভালো ক‍্যামেরা…. 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Click to Go Up
error: Content is protected !!