Home » শ্রাবণী পূর্ণিমার রাখীবন্ধন এবং ‘বঙ্গচ্ছেদে রাখীবন্ধন’ সম্পূর্ণ আলাদা দুটি ঘটনা

শ্রাবণী পূর্ণিমার রাখীবন্ধন এবং ‘বঙ্গচ্ছেদে রাখীবন্ধন’ সম্পূর্ণ আলাদা দুটি ঘটনা

পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে ভাইয়ের মঙ্গলকামনায় রাখি পরানোর প্রথা সেই রামায়ণ মহাভারতের যুগ থেকে চলে আসছে। ১৯০৫ সালের ক্যালেন্ডারে একটি নয় রাখি উৎসব পালিত হয় দুদিন ধরে। না পূর্ণিমা তিথি বা শ্রাবণ মাস নয়, বাংলার ৩০ শে আশ্বিন, ইংরেজি ১৬ই অক্টোবর দ্বিতীয় বার রাখি পালিত হয়। তিথি দেখে নয় বরং বঙ্গভঙ্গের বিল পাশ হওয়ার দিনটিই বেছে নেওয়া রাখি বন্ধন উৎসবের জন্য। আর পুরো উৎসবের নেপথ্যে ছিলেন অবশ্যই বাঙালির প্রাণের ঠাকুর রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর।

কথক ঠাকুর ক্ষেত্রমোহন গোস্বামীর প্রচেস্টায় সেই দিনটিও রাখি বন্ধন উৎসব বলে স্থান পেয়ে যায় সেই বছরের পঞ্জিকায়। তিনি এমনও আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, এই দ্বিতীয় রাখীর দিনটিও পঞ্জিকায় থেকে যাবে আজীবন। অবশ্য ১৯০৫ সালের পর আর কখনও ১৬ই অক্টোবর রাখি বন্ধন পালন হয়েছে কিনা তা অবশ্য জানা যায় না। বঙ্গভঙ্গের বিল পাশ হয় সেইদিন। তাই রবীন্দ্র ঠাকুর ভাতৃদিবস পালনের জন্য বেছে নিলেন সেই দিনটিকেই।

ঠিক হল সকাল বেলা জগন্নাথ ঘাটে স্নান সেরে শুরু হবে এই উৎসব। প্রকাশিত হয় সেদিনের ইশতেহার ‘বঙ্গচ্ছেদে রাখীবন্ধন’। রাখী ভাইদের মঙ্গল কামনায় বোনেরা তার হাতে পরায়, কিন্তু এই রাখীর দিন বোন ভাই লিঙ্গ ভেদাভেদ ভুলে নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলে সকলকে রাখী পড়াতে তৎপর হয়ে ওঠে। রবি ঠাকুর সহ ঠাকুরবাড়ির সদস্য চাকরবাকরেরা পর্যন্ত এই উৎসবে পথে নামে। বাংলার ইতিহাসে সেই বোধহয় প্রথম ধনী গরীব নির্বিশেষে হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করা। এখানেই শেষ নয় রাস্তায় সকলকে রাখী পড়িয়ে রবি ঠাকুর সিদ্ধান্ত নিলেন চিৎপুরের বড় মসজিদে রাখী পড়াতে যাবেন। যেমন ভাবা তেমন কাজ। মসজিদে গিয়ে সাম্প্রদায়িকতা ভুলে স্বয়ং মৌলবির হাতে রাখী পরিয়ে আসলেন।

হিন্দুদের শ্রাবণী পূর্ণিমায় পালিত রাখী বন্ধন উৎসবের সঙ্গে রবি ঠাকুরের রাখী বন্ধন উৎসব এক নয়। তবে রাখী বন্ধন আজও সেই মিলনের বানীকেই মনে করায় যা কিনা জাতি, ধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা, রাজনীতি এমনকি লিঙ্গভেদ সব কিছুর ঊর্ধ্বে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Click to Go Up
error: Content is protected !!