পিরিয়ড বা রজঃস্বলা জনসমক্ষে উচ্চারণ করা এখনো লজ্জাজনক। একুশ শতকে দাঁড়িয়ে এই প্রাকৃতিক ও সাধারণ একটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে দ্বিধা বোধ করেন নারী পুরুষ নির্বিশেষে। পিরিয়ডস নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা ও কুসংস্কার এখনো মানুষের মনে রয়ে গিয়েছে। তবে পিরিয়ডস নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা ও সচেতনতা বৃদ্ধি ঘটানোর সময় এসেছে। ভুল তথ্য যাতে প্রচার না হয় সেদিকে বিশেষ লক্ষ রাখতে হবে, সেটি সব মানুষেরই কর্তব্য।
পিরিয়ডের সময় যে রক্ত নির্গত হয়, তা মোটেই দূষিত বা নোংরা রক্ত নয়। কিংবা শরীর থেকে কোনও রকম টক্সিন দূর করে না। রক্তে জরায়ুর টিস্যু, শ্লেষ্মার আস্তরণ ও ব্যাকটেরিয়া থাকে, কিন্তু রক্তকে দূষিত করে না। এটি একটি শারীরিক প্রক্রিয়া যা নিয়ে কারোরই লজ্জা বা ঘৃণা করা একেবারেই উচিত নয়। পিরিয়ড চলাকালীন যেকোনও জায়গায় যেতে পারেন ও নিজের পছন্দ ও ইচ্ছা মতো যা খুশি তাই করতেও পারেন।
প্রত্যেকটি মহিলার এই পিরিয়ডস সাইকেল নিয়ে রয়েছে নানা সমস্যা। তবে শরীরের উপরই নির্ভর করে, পিরিয়ডসের সময়সীমা। সাধারণত পিরিয়ড সাইকেল হয় ২-৮দিন। আবার অনেকেরই ২ দিনের কম ও ৮দিনের বেশি সময়ও লাগতে পারে। তবে এমন সমস্যা হলে অবিলম্বে ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করুন।
মাসিক চলাকালীন টক জাতীয় খাবার এড়িয়ে যান অনেকেই। তবে এর কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। তবে এই সময় প্রতিটি মহিলারই স্বাস্থ্যকর খাবার ও ব্যালান্সড ডায়েট মেনে চলা উচিত। জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
মেনস্ট্রুয়েশনের সময় যতটা সম্ভব পরিস্কার থাকার চেষ্টা করুন। অনেকেই বিশ্বাস করেন, স্নানের সময় মাথায় জল দেওয়া, মেকআপ প্রোডাক্ট ব্যবহার না করা, স্নান করার উচিত নয়। তবে এই সময়টা সবচেয়ে বেশি পরিস্কার থাকা উচিত। প্রতিদিন স্নান করা, গোপনাঙ্গের এলাকাগুলি পরিস্কার রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হিন্দুধর্মকে বলা হয় পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্ম। পন্ডিতরা হিন্দুধর্মকে বিভিন্ন ভারতীয় সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সংমিশ্রণ এবং সংশ্লেষণ হিসেবে গন্য করেন যার মূলে রয়েছে একাধিক উৎপত্তির উৎস। ভারতীয় উপমহাদেশের একাধিক স্থানীয় ধর্মমত একত্রে হিন্দুধর্ম নামে পরিচিত। এই সনাতন ধর্ম মতে, শুচি হয়েই সমস্ত পুজোর কাজ করতে হয় মেয়েদের। যে কোনও অশৌচ ও রজস্বলা অবস্থায় পুজোর কোনও কাজ করা যায় না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এমনটাই শোনা যায়।
সেই জন্য ব্রতী অবস্থায় নখ, চুল ও দাড়ি কাটা নিষিদ্ধ হয়। যে কোনও মাঙ্গলিক কাজে সংকল্প করে বরণ হয়ে যাওয়ার পরে শুভ অশৌচ, মরণাশৌচ বা নারী রজস্বলা হলে মাঙ্গলিক কাজে অংশ নেওয়া যেতে পারে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, রজস্বলা অবস্থায় পুষ্পাঞ্জলি দিতে বাধা থাকলেও, সেই অবস্থায় অপর কোনও ব্যক্তি তার নামে পুজো দিয়ে দিতে পারেন। এমনকি কোনও মহিলা যদি মাঙ্গলিক কাজের সংকল্পের পর রজস্বলা হন, সে ক্ষেত্রেও তিনি সেই ব্রত পালন করতে পারবেন। এর কারণ মানুষ অশুচি হয় দেহে, মনে নয়। সনাতন ধর্ম মতে, ঈশ্বরকে স্মরণ করতে প্রয়োজন মনের শুচি, পবিত্র মনে ঈশ্বর স্মরণ করলেই সম্পন্ন হয় পুজোর সংকল্প, দেহের শুচিতা সে ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায় না।