পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে বলতে গেলে বলা শেষ করা সম্ভব নয়। যত কথা বলা হোক না কেন তার সম্বন্ধে সে যেন সমুদ্রের থেকে এক বিন্দু জল তোলার সামিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ব্যপ্তি সমুদ্র স্বরূপ। তাকে নিয়ে জানা বা বলার শেষ নেই। তার কৃতিত্বও কখনও বলে শেষ করা যাবে না। তবে তাকে নিয়ে অনেক ভুল কথা ভুল তথ্যও শোনা যায় প্রায়ই। একটা কথা রবীন্দ্র নাথকে নিয়ে প্রায়শই শোনা যায় যে পৃথিবীতে একমাত্র তিনিই নাকি ৩ টে দেশের জাতীয় সঙ্গীত রচনা করেছিলেন। কথাটা পুরোপুরি সত্য নয়। তবে এই কথা ছড়িয়ে পড়ার একটা কারণ আছে।
আমাদের ভারতবর্ষের জাতীয় সঙ্গীত ‘জনগণমন’-র রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ১৯১১ সালে জাতীয় কংগ্রেসের কলকাতা অধিবেশনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপস্থিতিতে প্রথম বারের জন্য গান হিসেবে গাওয়া হয় এই গান। তখন এটি নিছক একটি দেশাত্মবোধক গান মাত্র। পরবর্তী কালে স্বাধীনতা লাভের পর দেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি পান এই গান। এখন আর একটি সাধারণ গান নয় এটি, এখন ভারতবাসীর কাছে সবথেকে সম্মানের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়ে এই গান।
ওপরদিকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কলম নিঃসৃত। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলম ধরে সৃষ্টি করেন এক যুগান্তকারী গান ‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি’। বয়সের নিরিখে ‘জনগণমন’র থেকে কিছুটা পুরনো এই গান। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ অধুনা বাংলাদেশের মুজিবনগরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে এই গানটি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি পায়।
ভারত বাংলাদেশ ছাড়া ওপর যে দেশকে নিয়ে এই কথাটি জনপ্রিয় তা হল শ্রীলঙ্কা। বেশিরভাগ মানুষই বলে শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা। কথাটা সম্পূর্ণ ভুল। শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত ‘নমো নমো শ্রীলঙ্কা মাতা’ যার রচয়িতা আনন্দ সামারাকুন। তাহলে পৃথিবীতে এত দেশ থাকতে শ্রীলঙ্কার জাতীয় সংগীত নিয়েই কেন এই ভুল ধারণা? তার কারণ শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত রচয়িতা আনন্দ সামারাকুন ভীষণ ভাবে ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনুগামী। রবি ঠাকুরের জীবন বোধ তাকে গভীর ভাবে প্রভাবিত করেছিল। ১৯৩০ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতীতে চারুকলা ও সঙ্গীতের ছাত্র ছিলেন। তখন থেকেই তিনি রবীন্দ্রানুগামী। এমনকি শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতেও রবীন্দ্রানুগামীতার প্রভাব সুস্পষ্ট। সেই কারনেই এই ভুল তথ্য লোকমুখে প্রচলিত।