Home » পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কীভাবে পালিত হয় বুদ্ধ পূর্ণিমা ?

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কীভাবে পালিত হয় বুদ্ধ পূর্ণিমা ?

পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ কাল বুদ্ধ পূর্ণিমা (বুদ্ধ জয়ন্তী) , বুদ্ধ ধর্মের প্রবর্তক গৌতম বুদ্ধের জন্মদিন। বুদ্ধ ধর্ম মতে খ্রিস্ট পূর্ব ৫৬৩-৪৮৩ সালে নেপালে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। লুনিসলার ক্যালেন্ডার অনুযায়ী বুদ্ধদেবের জন্মের নির্দিষ্ট তারিখ থাকলেও পশ্চিমী গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তার জন্মের নির্দিষ্ট তারিখ পাওয়া যায় না। বুদ্ধ ও হিন্দু ক্যালেন্ডার মতে বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিকেই বুদ্ধ জয়ন্তী বা বুদ্ধদেবের জন্মদিন বলা হয়। তিব্বতে তিব্বতি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী চতুর্থ মাসের সপ্তম দিন বুদ্ধ জয়ন্তী পালন করা হয়। তাইওয়ানে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার বুদ্ধ জয়ন্তী পালন হয়। এই দিনটি বুদ্ধ জয়ন্তী হিসেবে পালিত হলেও এই দিন বুদ্ধদেব সিদ্ধিলাভ করেছিলেন এবং এই দিনেই তিনি দেহ ত্যাগ করেন।

ভারতবর্ষে বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনটি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন ডঃ ভীমরাও রামজি আম্বেদকর। ভারতে মুলত সিকিম, অরুনাচল প্রদেশ, বুদ্ধ গয়া, মহারাষ্ট্র, কালিংম্প, কারশিয়াং দার্জিলিং এ বুদ্ধ পূর্ণিমা পালিত হয়। বুদ্ধ ধর্মের ‘তেরাবেদ’ মতে এই দিন সকলে সাদা পোশাক পড়তে হয় এবং সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ক্ষীর এবং পায়েস খায়। বুদ্ধ গয়ার মহাবোধি মন্দিরে খুব ধুমধাম এবং জাঁকজমকের সাথে পালিত হয় বুদ্ধ পূর্ণিমা। গৌতম বুদ্ধের সিদ্ধি লাভ করার স্থান বোধি বৃক্ষের সামনে প্রার্থনা করা হয় এই দিন। দিল্লীর জাতীয় সংগ্রহশালার বুদ্ধদেবের ইতিহাস সংরক্ষিত স্থানটি এই দিন সমস্ত দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

মুলত দক্ষিণ এশিয়া বুদ্ধ পূর্ণিমা পালিত হলেও কম বেশি পৃথিবীর সব দেশেই পালিত হয় বুদ্ধ পূর্ণিমা। আসুন দেখে নি কোন দেশে কীভাবে পালিত হয় এই উৎসব।

• বাংলাদেশঃ বাংলাদেশে বুদ্ধ পূর্ণিমা খুব ধুমধাম করে পালিত হয়। এই দিন বুদ্ধ মন্দির গুলিতে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা মন্দির সাজিয়ে খুব বড় করে পালন করে এই দিন। রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান মন্ত্রী এই দিন বুদ্ধ ধর্মের ইতিহাস নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বক্তৃতা দেন। বিকেল থেকেই মেলা বসে মন্দির প্রাঙ্গণে। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা বুদ্ধ দেবের জীবনের নানা কাহিনী শোনান। মন্দিরের মূল প্রার্থনা ঘরে প্রধান সন্ন্যাসী বক্তৃতা দেন এবং তারপর বুদ্ধদেবের সামনে প্রার্থনা করেন।

• ভুটানঃ ভুটানে এই দিনটি জাতীয় ছুটির দিন। তিব্বতি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সাগা দেয়া মাসের পূর্ণিমায় এই অনুষ্ঠান হয়। পুরো সাগা দেয়া (বৈশাখ) মাস জুড়েই প্রতিটি বাড়ি, মন্দির, মনেস্ট্রি গুলিতে বিভিন্ন নিয়ম পালন করা হয়। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা সারা মাস জুড়ে নিরামিষ খাবার খান। বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন সকলে মিলে তাদের জাতীয় পোশাক পড়ে মনেস্ট্রিতে গিয়ে প্রদীপ জ্বালান এবং প্রার্থনা করেন।

• কম্বোডিয়াঃ কম্বোডিয়াতেও খুব ধুমধাম করে পালিত হয় এই দিন। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা বুদ্ধ ধর্মের পতাকা, ফুল, ধুপকাঠি মোমবাতি নিয়ে রাস্তায় মিছিল করে হেটে যায়। এই দিন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের ভিক্ষা দেওয়াকে খুব পুন্যের কাজ বলে মনে করে সকলে।

• চীনঃ চীনে এই দিনটি মনেস্ট্রিগুলোতে ধুমধাম করে পালন করা হয়। মনেস্ট্রি গুলো সুন্দর করে ফুল আর লাইট দিয়ে সাজানো হয়। সাধারণ মানুষরা মনেস্ট্রি তে আসেন এসে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রার্থনা করেন। বুদ্ধ সন্ন্যাসীদের খাওয়ার দেওয়া হয়। বুদ্ধ সন্ন্যাসীদের এই দিন খায়ানো খুব পুণ্যের বলে মনে করা হয়।

• হংকংঃ হংকং এ এই দিনটি জাতীয় ছুটির দিন। এই দিন বুদ্ধদেবের সিদ্ধিলাভের প্রতীক হিসেবে মোমবাতি জ্বালানো হয় সব বাড়িতে এবং মনেস্ট্রি তে। এই দেশে বুদ্ধ জয়ন্তী পালনের একটি বড় প্রকিয়া হল বুদ্ধ মূর্তিকে গোলাপ জল দিয়ে স্নান করানো। প্রতিটি মনেস্ট্রি তে এই নিয়ম খুব শ্রদ্ধা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা হয়।

• ইন্দোনেশিয়াঃ এই দিন পুরো দেশ জুড়ে একটা শোভাযাত্রা আয়োজন করা হয়। এই শোভাযাত্রা জাভার মেন্দুত থেকে শুরু হয়ে বরবুদুর বুদ্ধ মন্দিরে গিয়ে শেষ হয়। বরবুদুর পৃথিবীর সবথেকে বড় বৌদ্ধ মন্দির। এই মন্দিরে প্রার্থনা করে এই দিনটি উৎযাপন করে দেশবাসী।

• মালায়েশিয়াঃ এইদিন পুরো দেশ জুড়ে বন্দি পশু পাখিদের মুক্তি দেওয়া হয় বুদ্ধ দেবের আদেশানুসারে। এই দিন দেশ জুড়ে সকল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা প্রার্থনা, জপ করে। এই দিন গরীবদের সাহাজ্যের হাত বাড়িয়ে দেয় দেশের মানুষ।

• নেপালঃ নেপালে বুদ্ধ জয়ন্তী মে মাসের পূর্ণিমার দিন পালিত হয়। নেপালে শাক্য বংশের নেওয়ার মধ্যে এই দিনটি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎসব। কারন তারা মনে করেন শাক্য ঋষির বংশ ধর ছিলেন বুদ্ধদেব। বৌদ্ধ ধর্মের প্রকৃতির কথা মাথায় রেখে অনুষ্ঠানটি নির্মল ভাবে পালিত হয়। লোকেরা বিশেষত মহিলারা এই দিন বৌদ্ধ বিহার গুলিতে যায় এবং প্রার্থনা করে। সাদা পোশাক পড়তে হয় এই দিন। এই দিন সকলে নিরামিষ খায়। সুজাতার গল্প স্মরণ করে এই দিন ক্ষীর ও পায়েস খাওয়া হয়।

এশিয়ার দেশ বাদেও পৃথিবীর বেশ কিছু বড় বড় দেশে বুদ্ধ জয়ন্তী পালিত হয়।
• অস্ট্রেলিয়াঃ সিডনিতে নান তিয়েন মন্দিরে বুদ্ধ জয়ন্তী খুব ধুমধাম করে পালিত হয়। চীন, জাপান ভিতেতনাম, কোরিয়া ভারতের বিভিন্ন সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটানোর জন্য বিভিন্ন রকম সাংস্কৃতিক স্টল বসে। বিভিন্ন রকম নিরামিষ খাবার পাওয়া যায়। মেলবর্নে নান তিয়েন মন্দিরে একটা গোটা সপ্তাহ জুড়ে বুদ্ধ জয়ন্তী পালিত হয়। প্রতি বছর লক্ষাধিক দর্শনার্থী আসেন এই উৎসবে সামিল হতে। এই উৎসব বুদ্ধ দিবস নামে পরিচিত। এছাড়া স্থানীয় বুদ্ধ মন্দির গুলিতেও পালিত হয় বুদ্ধ পূর্ণিমা।


• কানাডাঃ টরেন্ট তে তিনটি বুদ্ধ মন্দির মিলে বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন মিসিসুগা সেলিব্রেশন স্কয়ারে একটি বিশাল উৎসব আয়োজন করে। বুদ্ধ ধর্মের বিভিন্ন আচার নিয়ম সংস্কৃতি মাথায় রেখেই সাজানো হয় এই উৎসবকে।


• ইউএসঃ এখানে উৎসব পালন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের আলাদা আলাদা ঐতিহ্য মেনে আলাদা আলাদা ভাবে পালিত হয়। বুদ্ধ জয়ন্তী উপলক্ষে একটি বিশাল পরিক্রমা আয়োজন করা হয়। প্রায় ৭০ জন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী এবং বৌদ্ধ ভিক্ষুরা কালো পোশাক পড়ে এই পরিক্রমায় অংশগ্রহণ করেন। পাথর দিয়ে একটি বুদ্ধ মূর্তি তৈরি করা হয় তাকে একটি ওক গাছের নিচে বসিয়ে পূজা করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Click to Go Up
error: Content is protected !!