Home » রাজার জয় ঠেকানো সম্ভব না- শুভ জন্মদিন বাঙালির একমাত্র রাজা

রাজার জয় ঠেকানো সম্ভব না- শুভ জন্মদিন বাঙালির একমাত্র রাজা

পর্ণা চ্যাটার্জী, কলকাতাঃ সালটা ১৮১২। হুগলী কলেরা মহামারী শুরু হল। একের পর এক মানুষ মারা যেত লাগল। ঘরে ঘরে মৃত্যুর হাতছানি। মৃত্যুর জোয়ার এসে ঢুকল রাধানগর রায় বাড়িতে। মারা গেলেন জগমোহন রায়। তার ৯ বছরের বালিকা বধূ স্বামীর সাথে সহমরণে যাবে। দিকে দিকে ঢাক ঢোল বেজে উঠল সকলেই মহাসতী মহাসতী করে তার জয়ধ্বনি দিতে থাকল। বাচ্চা মেয়েটি স্বামীর চিতায় পুড়ে ছাই হয়ে গেল।

রাজার জয় ঠেকানো সম্ভব না- শুভ জন্মদিন বাঙালির একমাত্র রাজা

সেই বালিকার দেওয়র যখন পৌঁছালেন ততক্ষণে সব শেষ। দূরে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারলেন না তিনি। সেই থেকে প্রতিজ্ঞার শুরু আর কোন মেয়েকে তিনি জ্যন্ত পুড়ে মরতে দেবেন না। কার কথা বলছি আশা করি সকলেই বুঝতে পারছেন। হ্যাঁ বাংলার একমাত্র রাজা তিনি বাঙালির রাজা, রাজা রাম মোহন রায়। আজ তার ২৫১ তম জন্মদিন। কিন্তু আজও এত বছর পরেও তিনি আছেন প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে।

রাজার জয় ঠেকানো সম্ভব না- শুভ জন্মদিন বাঙালির একমাত্র রাজা

সেই প্রতিজ্ঞা পূরণ হয় ১৮২৯ সালে, বড় লাট লর্ড বেন্টিংকের সাহায্যে। আইন করে সতীদাহ প্রথা বন্ধ করা হল। কিন্তু এখানেই কি লড়াই শেষ? আইন কি সব? আইন প্রণয়ন হল আর সবাই তা মেনে চলল এত সহজ তো সবটা নয়। কোথাও কোন সতীদাহের খবর পেলে ছুটে জেতেন তাদের উদ্ধার করতে।

রাজার জয় ঠেকানো সম্ভব না- শুভ জন্মদিন বাঙালির একমাত্র রাজা

শোভাবাজার রাজ বাড়ীর তৎকালীন রাজা সারদাকান্ত দেবের সাহায্যে হিন্দুরা এই আইনের বিরোধিতা করে আবার আদালতে গেলেন। রাজা ভাবলেন যদি সত্যি আইন পাল্টে যায় সেই কারণে তিনি চলে গেলেন ইংল্যান্ড। উদ্দেশ্য ইংল্যান্ডে গিয়ে ওপরমহলের থেকে আইন পাশ করিয়ে আনা। কিন্তু ভাগ্য সাথ দিল না ১৮৩৩ সালে ইংল্যান্ডে মারা গেলেন তিনি। কিন্তু আইন বলবত রইল। বহু নারী সতী হওয়া থেকে রক্ষা পেল।

রাজার জয় ঠেকানো সম্ভব না- শুভ জন্মদিন বাঙালির একমাত্র রাজা

নারী শিক্ষা, বিধবা বিবাহ, বহু বিবাহ রদ, সতীদাহ বন্ধ করা এসবই শুরু তার হাত ধরেই। তিনি যদি নারীকে শিক্ষিত করার চেষ্টা না করতেন বা নারীদের মধ্যে শিক্ষার ইচ্ছা চেতনাবোধ না জাগাতেন তাহলে বোধহয় আজকের সমাজ তৈরি হত না। নারীরা আজও রান্না ঘরে বসে থাকত উনুনের সামনে। দিনকাল এগত কিন্তু মানুষ পিছিয়ে থাকত সেই কয়েকশো বছর আগেই।

রাজার জয় ঠেকানো সম্ভব না- শুভ জন্মদিন বাঙালির একমাত্র রাজা

সেই সময় রাজাকে সহ্য করতে হয়েছে শত লাঞ্ছনা গঞ্জনা। তার পিতা তাকে তাজ্য পুত্র করেছেন। তার অনুগামী একদল যুবক তাদের নিয়ে তৈরি হয় ব্রাহ্ম সমাজ। ব্রাহ্ম সমাজকে তৎকালীন যুগে নিচু নজরে দেখা হত। রাজা রাম মোহন রায়ের মৃত্যুর পরও ব্রাহ্ম সমাজ তার অসমাপ্ত কাজ চালিয়ে গেছে। তিনি যতদিন বেঁচে ছিলেন তাকে সমাজের কাছে জোড় করে মাথা নত করে রাখতে বাধ্য করা হয়েছে। কিন্তু আজও সারা দেশ মাথা নত করে আছে তারই উদ্দেশে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Click to Go Up
error: Content is protected !!